বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে নায়করাজ হিসেবে পরিচিত রাজ্জাক (Razzak) একাধারে একজন অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছেন।
কিশোর বয়সে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে জড়িয়ে পড়েন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ১৯৬৪ আলে দাঙ্গার সময় ঢাকা চলে আসেন পরিবারের সাথে। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সহযোগিতায় ইকবাল ফিল্মসে কাজ করার সুযোগ পান। পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে ‘উজালা’ ছবিতে কাজ শুরু করেন। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ’কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরী স্টেশন’সহ আরও বেশ ক’টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে তিনি। পরে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন এবং সবার মন জয় করে নেন। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি নায়করাজ হিসেবে পরিচিতি পান।
রাজ্জাক প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ থেকে তিনি কবরীর সাথে জুটি গড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই জুটি ‘আবির্ভাব‘ ও ‘বাঁশরী‘ (১৯৬৮); ‘ময়নামতি‘ ও ‘নীল আকাশের নীচে‘ (১৯৬৯); ‘যে আগুনে পুড়ি‘, ‘ক খ গ ঘ ঙ‘, ‘কাঁচ কাটা হীরে‘ ও ‘দীপ নেভে নাই‘ (১৯৭০); ‘স্মৃতিটুকু থাক‘ (১৯৭১); ‘রংবাজ‘ (১৯৭৩); ‘গুন্ডা‘ (১৯৭৬) সহ অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দেয়।
নায়করাজ শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, পরিচালক হিসেবেও সফল। অনন্ত প্রেম চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে তিনি পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন ববিতা। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম চুম্বন দৃশ্যের জন্য এই ছবিটি পরিচিত। অবশ্য ছবিটির দৃশ্যায়ন করা হলেও মুক্তির আগে তা বাদ দেয়া হয়। রাজ্জাক পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেছেন। চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষী প্রোডাকশন।
নায়করাজ মোট ছয়বার জাতীয় সম্মাননা পেয়েছেন। ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরের চারটি পুরস্কার পান ‘অশিক্ষিত’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ‘চন্দ্রনাথ’ ও ‘যোগাযোগ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। ২০১১ সালের তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।
রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি। তিনি বাবা আকবর হোসেন ও মা মিরারুন্নেসার কনিষ্ঠ সন্তান। রাজ্জাকের দুই পুত্র বাপ্পারাজ এবং সম্রাটও চলচ্চিত্র অভিনেতা। তিনি ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।