অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকারের নাম আলাউদ্দিন আলী। চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি তিনি বেতার এবং টেলিভিশনের জন্য গানে সুর করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রের জন্য গানও লিখেছেন তিনি। তার জন্ম পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন লেনে এবং তার শৈশব থেকে শুরু করে কর্মজীবনে প্রবেশ পর্যন্ত সময় কেটেছে মতিঝিলের এজিবি কলোনীতে।
আলাউদ্দিন আলী ছোটবেলাতেই বেহালা বাজানোর জন্য ‘অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায়’ পুরস্কার পান। এ ঘটনা স্মরণ করতে গিয়ে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ক্লাস থ্রি-তে পড়ার সময় তার ছোট চাচা একদিন তাকে একটি চায়নিজ বেহালা উপহার দেন। ওই বেহালা দিয়েই তিনি বেহালা শেখা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খানের নিকট থেকে তিনি শ্রেষ্ঠ বেহালাবাদকের পুরস্কার গ্রহণ করেন।
বেহালা বাজাতে গিয়েই তিনি চলচ্চিত্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বেতারের শিশুদের অনুষ্ঠানে বেহালাবাদক ছিলেন। সম্ভবত ১৬৯৭ সালে বেহুলা নামক চলচ্চিত্রের যন্ত্রসঙ্গীত দলে বেহালাবাদক হিসেবে বাজানোর সুযোগ পান। তৎকালীন বড় বড় সঙ্গীত পরিচালকদের সাথে কাজ করার সুবাদে তার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৫ সালে ‘সন্ধিক্ষন’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে প্রথম সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরের দুই বছর তিনি আর কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা না করলেও ১৯৭৭ সালে একই সাথে দুটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেন – একটি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং অন্যটি ‘ফকির মজনু শাহ’। দুটি চলচ্চিত্রের গানই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং তাকে বিশেষ পরিচিতি এনে দেয়।
তিনি প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের গানে সুরারোপ করেন। রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার গানের সুরকার আলাউদ্দিন আলী। চলচ্চিত্রের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি মোট আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এর মাঝে ১৯৭৯, ১৯৮০ এবং ১৯৮১ সালে পরপর তিনবছর চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে হ্যাট্রিক করেন।
আলাউদ্দিন আলী ‘এলসিএস’ নামে একটি সংগঠন করেছেন যেটা শিল্পীদের রয়্যালটি এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করে। ‘একতারা মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন’ নামে তিনি একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যেখানে সংগীত তৈরির নানান কাজ করা হয়।
আলাউদ্দিন আলী বিয়ে করেছিলেন শিল্পী সালমা আলীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়।