ফেরদৌস আহমেদ

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর ‘বুকের ভেতর আগুন’ ছবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন ফেরদৌস আহমেদ (Ferdous Ahmed)। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আরও অনেকগুলো পুরস্কার জিতেছেন, দেশে বিদেশে সম্মান কুড়িয়েছেন।

সালমান শাহের অকাল প্রয়ানে চলমান বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘বুকের ভেতর আগুন’ চলচ্চিত্রটি। গল্পে কিছুটা পরিবর্তন করে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেন ছটকু আহমেদ আর এভাবেই ফেরদৌস চলচ্চিত্রাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন। একক নায়ক হিসেবে ফেরদৌসের যাত্রা শুরু হয় অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ‘পৃথিবী আমারে চায় না’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবুর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন তিনি। আমির হোসেন বাবু পরিকল্পনা করেছিলেন নৃতবিষয়ক একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন। ছবির নাম হবে ‘নাচ ময়ূরী নাচ’। ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফেরদৌসকে নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু চলচ্চিত্রটি নির্মান করা হয়ে উঠে নি।

বাসু চ্যাটার্জীর ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবি দিয়ে ফেরদৌস জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি অর্জন করেন। এরপর তিনি মৌসুমী, শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা-সহ সকল শীর্ষস্থানীয় চিত্রনায়িকার সাথে কাজ করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। বলিউডের একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, ছবির নাম ‘মিট্টি’।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে ফেরদৌস একজন র‌্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের হাত ধরে র‌্যাম্প জগতে যাত্রা শুরু করেন ফেরদৌস। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বেশ কিছু বড় ফ্যাশন শো’র র‌্যাম্পিং এ অংশ নিয়েছিলেন ফেরদৌস। বর্তমানে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করলেও ফেরদৌস বর্তমানে ছবি প্রযোজনাও করছেন। তার প্রতিষ্ঠান ‘সিনেমা স্কোপ’ এর প্রযোজনায় দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত। এদের একটি বাসু চ্যাটার্জীর পরিচালনায় ‘হঠাৎ সেদিন’ (২০১৩) এবং অন্যটি ইমতিয়াজ নেয়ামুলের পরিচালনায় ‘এক কাপ চা’ (২০১৪)। উল্লেখ্য, বাসু চ্যাটার্জী পরিচালিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই ফেরদৌস কলকাতা জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। দুই বাংলায় জনপ্রিয়তা অর্জন করা প্রসঙ্গে বাংলামেইলের এক প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস নিজেকে সৌভাগ্যবান দাবী করেন এবং জানান, জন্মভূমির প্রতিই তার বেশী টান, তবে তিনি দুই বাংলায়ই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চান।

২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলানিউজ২৪ এর সাথে এক সাক্ষাতকারে ফেরদৌস জানান কুয়াকাটা এবং সেন্টমার্টিনে তিনি দুটি রিসোর্ট গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন। সেন্টমার্টিনের রিসোর্টটি প্রখ্যাত উপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদের সাথে মিলে তার মালিকানাধীন জমিতে তৈরী। একই সাক্ষাতকারে ফেরদৌস জানান হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার প্রিয় অভিনেত্রী এবং তার সাথে একবার অভিনয় করার সুযোগ পেলে তিনি ধন্য হতেন।

ফেরদৌসের ব্যক্তিগত লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানা যায় অজানা সব তথ্য। যেমন পোশাক আশাকের ক্ষেত্রে ট্রু রিলিজিওন, ডি অ্যান্ড জি, আরমানি, এক্সপ্রেশনস ও স্পাইকার ব্র্যান্ডের জিনস তার পছন্দ। আর আরমানি, গুচির সাধারণ নকশার রংচটা ধরনের টি-শার্ট সব সময় পরেন। ভাসাভি, নাবিলা, মান্যবর বা মানিশ মালহোত্রার বিশেষ নকশার পাঞ্জাবি যেমন পরেন, আবার পরিবেশ বুঝে সুতি বা খদ্দরের পাঞ্জাবিও পরে থাকেন। ফরমাল অনুষ্ঠানে প্রিন্স কোট বেছে নিচ্ছেন কিছুদিন ধরে। বাংলাদেশে সানমুনের দূত তিনি। সানমুনের বাইরে আরমানি ও গুচির স্যুট-কোট পরেন। ফেরদৌসের রামিম রাজ নামের একজন নিজস্ব ডিজাইনার আছেন। ব্র্যান্ডের বাইরে বেশির ভাগ পোশাকের নকশা তিনি করে থাকেন। নাইকি, রিবোক ও অ্যাডিডাসের রং-বেরঙের স্নিকারস পরতে ভালোবাসেন। নটিকা, ইসে মিয়াকে, গুচি ও ব্ল্যাক ব্র্যান্ডের সুগন্ধি ঘুরে-ফিরে ব্যবহার করেন।

পারিবারিক জীবনে বিবাহিত ফেরদৌসের স্ত্রী তানিয়া ফেরদৌস একজন বৈমানিক। পুত্র নুজহাত ফেরদৌস এবং কন্যা নুজরান ফেরদৌসকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার।

 

ব্যক্তিগত তথ্যাবলি

পুরো নামফেরদৌস আহমেদ
ডাকনামফেরদৌস
জন্ম তারিখজুন ৭, ১৯৭৪
জন্মস্থানতিতাস, কুমিল্লা

কর্মপরিধি

পুরষ্কার

পুরষ্কারবছরফলাফলবিভাগ/গ্রহীতাচলচ্চিত্র
জয়ীআইকনিক ফিল্ম স্টার
জয়ীশ্রেষ্ঠ অভিনেতা এক কাপ চা
জয়ীশ্রেষ্ঠ অভিনেতা হঠাৎ বৃষ্টি
জয়ীশ্রেষ্ঠ অভিনেতা (সমালোচক)