এটিএম শামসুজ্জামানের (ATM Shamsuzzaman) পরিচয় একাধিক। তিনি একজন কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং অভিনেতা। সহকারী পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করে লেখক হিসেবে সুনাম অর্জন শেষে অভিনয়ে থিতু হন এটিএম শামসুজ্জামান, চলচ্চিত্র নির্মান কাজেও নিজেকে যুক্ত করেছেন বছর কয়েক আগে।
১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য লিখেন। ছবির নাম জলছবি এবং এর পরিচালক ছিলেন এইচ আকবর। উল্লেখ্য এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুক যাত্রা শুরু করেন। এটিএম শামসুজ্জামান বিভিন্ন পরিচালকের সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এদের মধ্যে খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্ত অন্যতম।
১৯৬৫ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। প্রথম অভিনীত ছবি ‘ন্যায়ী জিন্দেগী’ যা শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয় নি। এসময় তিনি ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৭৪ সালে তিনি আমজাদ হোসেন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নয়নমনি’তে অভিনয়ের সুযোগ পান। মন্দলোকের চরিত্রে অভিনয় করে এটিএম শামসুজ্জামান তার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্টে পৌছে যান, ছবিটিও দর্শকপ্রিয়তা পায়। ফলে পরিচালকরাও তাকে একের পর এক খলনায়ক চরিত্রে কাস্ট করতে লাগলেন। টাইপড হয়ে যাচ্ছেন এমন আশংকা থেকে অভিনয়ে বৈচিত্র নিয়ে আসার চেষ্টা করেন এটিএম শামসুজ্জামান। মন্দলোকের পাশাপাশি কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও অভিনয় করতে শুরু করেন এবং এখানেও সফল হন।
তার পরিচালনার প্রথম ছবি ‘এবাদত’। ২০০৬ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি মোটামুটি দর্শকপ্রিয়তা লাভ করলেও এটিএম শামসুজ্জামান আর কোন চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজে হাত দেন নি। কারণ হিসেবে তিনি রুচিশীল প্রযোজকের অভাবকে দায়ী করেন।
অভিনয়ে সাফল্য লাভ করলেও এটিএম শামসুজ্জামান মনে করেন কপালগুনে তিনি অভিনেতা হয়ে গেছেন, তিনি হতে চেয়েছিলেন সাহিত্যিক। বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিক ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সত্যেন সেন, রনেশ দাসগুপ্ত, উদয়ন চৌধুরী, খালেদ চৌধুরী প্রমুখ ব্যক্তির সংস্পর্শ এবং অনুপ্রেরণা তাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলে দাবী করেন তিনি। লেখালিখির অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি তার স্কুল জীবনের কথা উল্লেখ করেন। স্কুল ম্যাগাজিনে লেখার উদ্দেশ্যে তিনি ‘অবহেলা’ শিরোনামে একটি ছোটগল্প লিখেন যা কবি ফেরদৌসির একটি ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। গল্পটি তিনি ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে দেখান। ডঃ শহীদুল্লাহ তার আত্মীয় ছিলেন। রনেশ দাশগুপ্ত তাকে বিভিন্ন সময়ে লেখার ব্যাপারে পরামর্শদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।
এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার এবং প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান আজও তার শ্রেষ্ঠ অভিনয়টি করতে পারেন নি বলে মনে করেন। তিনি এমন অভিনয় করে যেতে চান যার জন্য বাংলাদেশের দর্শক তাকে সারাজীবন মনে রাখবে।