একজন তুখোর কৌতুকাভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত হাসমতের পুরো নাম হাসমত উল্লা খান। কৌতুকাভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এই অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও ছিলেন সফল। তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
হাসমত ১৯৩৬ সালে ঢাকার বংশালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
ছোটবেলা থেকে তার অভিনয়ের প্রতি প্রচন্ড ঝোঁক ছিল। একসময় তিনি মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত হন। বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেন, তবে তিনি নাটকে কখনই কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেননি, সিরিয়াস ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, এমন কি তিনি ভিলেন হিসেবেও অভিনয় করেছেন তখন।
হাসমত-এর চলচ্চিত্রে আগমন হয় সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬০ সালে উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘বিষকন্যা’ (মুক্তিপায়নি) ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন, পরবর্তীকালে তিনি নারায়ণ ঘোষ মিতা’র সাথে কাজ করেন। তিনি মিতার ‘চাওয়া পাওয়া’ (১৯৬৭) ছবিতে অভিনেতা ও সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে আগমন করেন।
হাসমত অভিনীত প্রথম ছবি এম এ খলিল পরিচালিত ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পুনম কি রাত’। এরপর তিনি আরো যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- চাওয়া পাওয়া, এতটুকু আশা, ময়না মতি, জোয়ার ভাটা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, মলুয়া, দীপ নিভে নাই, বিনিময়, শেষ পরিচয়, মানুষের মন, অবুঝ মন, বলাকা মন, উৎসর্গ, অঙ্গীকার, রংবাজ, অতিথি, অনন্ত প্রেম, মধুমিতা, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, চোখের জলে, মধুমিলন, হাবা হাসমত, চাবুক, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, হাসি কান্না, বধূ মাতা কন্যা, চাবুক, পিঞ্জর, দুইপর্ব, ঢেউয়ের পরে ঢেউ, উপহার, কত যে মিনতি, কাঁচের স্বর্গ, জেহাদ, আলো তুমি আলেয়া, অন্তরালে, আঁধারে আলো, টাকার খেলা, বধূ বিদায়, ভুল যখন ভাঙলো, এখানে আকাশ নীল, হাসি কান্না, নকল মানুষ, আসামী, আসামী হাজির, বারুদ, কথা দিলাম, বাঁধনহারা, নাগরদোলা, ছন্দ হারিয়ে গেল, কুয়াশা, ধন্যিমেয়ে, অপরাধ, সমাধান, সোনা বৌ, বউ হবো ইত্যাদি।
হাসমত শুধু কৌতুক অভিনেতাই ছিলেন না। তিনি একজন সফল চলচ্চিত্র পরিচালকও ছিলেন। হাসমত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘এখানে আকাশ নীল’ ছবিটি পরিচালনার মাধ্যমে। তার পরিচালিত অন্যান্য ছবিগুলো হলো- স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, হাসি কান্না, নকল মানুষ, মধুমতি, বিধান, ন্যায় বিচার, ববি, বউ হবো, প্রভৃতি।
হাসির রাজা হাসমত এক সময় এতোটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, তাঁর নামে তাঁকে প্রধান চরিত্র করে, ‘হাবা হাসমত’ নামে একটি ছবিও হয়েছিল। সোহরাব আহমেদ পরিচালিত সেই ছবিতে হাসমত নায়িকা কবিতার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। সেই থেকে হাসমত-এর নাম কিংবদন্তী হয়ে যায়- ‘হাবা হাসমত’ নামে।
তিনি ২০০৪ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। কৌতুক অভিনেতা হাসমত তার চলচ্চিত্র কর্মের মাধ্যমে, চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন।