অলিভিয়া

১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন অলিভিয়া। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের রক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যের বাইরে প্রথম অভিনয় করেছিলেন অলিভিয়া। নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে তাঁর জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অলিভিয়া অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘মাসুদ রানা’, ‘দ্য রেইন’, ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘পাগলা রাজা’, ‘বাহাদুর’, ‘শাহজাদী’, ‘গুলবাহার’, ‘বেদ্বীন’, ‘শ্রীমতি ৪২০’, ‘চন্দ্রলেখা’, ‘টক্কর’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘ডার্লিং’, ‘রাস্তার রাজা’, ‘বন্ধু’, ‘লাল মেমসাহেব’, ‘তকদিরের খেলা’, ‘সতীনাথ কন্যা’, ‘ভাইবোন’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘জংলি রাণী’, ‘জামানা’, জীবন সংগীত’, ‘শপথ নিলাম’, ‘টাকার খেলা’, ‘দূর থেকে বলছি’, ‘সেয়ানা’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘শাপমুক্তি’, ‘একালের নায়ক’, ‘কুয়াশা’, ‘আগুনের আলো’, ‘কালা খুন’, ‘আগুন পানি’ ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘দুশমনি’।

অলিভিয়ার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। দেশভাগের পর অলিভিয়ার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশে) চলে আসে। ওই সময় পরিবারটি ঢাকার মগবাজারে ইস্পাহানি কলোনির গলিতে বসবাস করত। খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল ভারতের গোয়ায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অলিভিয়া হোটেল পূর্বাণীতে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই ও চার বোন। এক বোন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারহোস্টেস ছিলেন। আরেক বোন কলকাতায় থাকতেন। বাবা বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার রিডিং সেকশনে কাজ করতেন। ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করা অলিভিয়া মাত্র ১৪ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন। তখন একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। তিনি ৫৩টি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

অমল বোস

জনপ্রিয় প্যাকেজ অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’-তে নানা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সুপরিচিত অমল বোস। তিনি মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্র প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাজা সন্ন্যাসী’। তার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কেন এমন হয়’। তিনি ‘মহানায়ক’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘অচল পয়স’, ‘দাঙ্গা’ ছবিতে অভিনয় করেন।

১৯৯৪ সালের ‘আজকের প্রতিবাদ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। একই বছর তিনি মহাকাব্যিক ‘সোহরাব রুস্তম’ ছবিতে মাজেন্দ্রনের সুলতান সফেদ সাদা চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘মহামিলন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘অজান্তে’, ‘স্বজন’, ‘কে অপরাধী’, ‘রাঙা বউ’, ‘অধিকার চাই’, ‘সাগরিকা’, ‘মধু পূর্ণিমা’, ‘অনন্ত ভালবাসা’, ‘আমি তোমারি’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ’, ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘হাসন রাজা’, ‘রং নাম্বার’, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘এক টাকার বউ’, ‘এক কাপ চা’ প্রভৃতি।

তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ১২ অক্টোবর (১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ২৬ আশ্বিন) ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার চত্রুল গ্রামে। তার আসল নাম অমলেন্দু বোস। তিনি ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি ইহলোক ত্যাগ করেন।

অনন্য মামুন

অনন্য মামুন কাহিনীকার আবদুল্লাহ জহির বাবুর সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই কাহিনীকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কাহিনীকার হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘জানোয়ার’। তার লেখা অন্যান্য চলচ্চিত্র হল ‘কথা দাও সাথী হবে’, ‘তোমার জন্য মরতে পারি’, ‘১০ নং মহাবিপদ সংকেত’, ‘অন্ধকার জীবন’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘জাদরেল সন্তান’, ‘তুমি আমার স্বামী’।

অনন্ত জলিল প্রযোজিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবির মাধ্যমে অনন্য মামুন তার পরিচালনার অধ্যায় শুরু করেন। এরপর তিনি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘ভালোবাসার গল্প’, ‘অস্তিত্ব’, ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘চালবাজ’, ‘তুই শুধু আমার’, ‘আবার বসন্ত’, ‘মেকআপ’, ‘নবাব এলএলবি’, ‘কসাই’, ‘সাইকো’, ‘অমানুষ’, ‘রেডিও’ ও ‘দরদ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

অনন্যর জন্ম ১৯৮৬ সালের ১ মার্চ বগুড়ার উত্তর চেলোপাড়াতে। তার আসল নাম আল মামুন। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস সম্পন্ন করেছেন।

অন্তরা

অন্তরা শিশুশিল্পী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘শিকল’। একই বছর তিনি ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে অভিনয় করেন। এছাড়া তাকে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে শিশু জোসনার চরিত্রে দেখা যায়। প্রধান নায়িকা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে। এরপর তিনি ‘বালিকা হল বধূ’, ‘প্রেমের সমাধি’, ‘শয়তান মানুষ’, ‘সুপারম্যান’, ‘আমার মা’, ‘বেইমানের শাস্তি’, ‘আলিফ লায়লা আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ, ‘প্রেমের কসম’, ‘নিষ্পাপ বধূ’, ‘লাঠি’, ‘গরীবের অহংকার’ ও ‘পারলে ঠেকাও’ ছবিতে অভিনয় করেন।

অন্তরার জন্ম ঢাকায়। তার পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা আইএ।

রিয়াজ

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ (Riaz)। চলচ্চিত্রে আসার আগে রিয়াজ এয়ারফোর্সে চাকরী করতেন। পড়াশোনা বিএসসি, অ্যারোনেটিক্স। চাচাতো বোন ববিতার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বাংলার কমান্ডো’।

রিয়াজ শাবনূর ও পূর্ণিমার সাথে জুটি বেঁধে দর্শকদের একাধিক সফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। তিনি  দুই দুয়ারী (২০০০), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) এবং কি যাদু করিলা (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারে ভূষিত হন। 

শাবনূর

পরিচালক এহতেশাম এর হাত ধরে ‘চাঁদনি রাতে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেন শাবনূর (Shabnur). প্রায় একই সময়ে যাত্রা শুরু করা সালমান শাহ‘র সাথে জুটিবন্ধ হয়ে একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন শাবনূর। সালমান শাহ’র মৃত্যুর পরেও তার সেই অগ্রযাত্রা বন্ধ হয় নি। মান্নারিয়াজ, শাকিল, ফেরদৌস সহ বিভিন্ন নায়কের সাথে জুটি বেধে সফল ছবি উপহার দিয়েছেন শাবনূর। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার বাচসাস পুরস্কার এবং রেকর্ড সংখ্যক ১০বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জয় করেছেন।  Continue reading

রোজিনা

আশি ও নব্বই দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রীর নাম রোজিনা। টানা চোখের অপরূপ সুন্দরী এই নায়িকার পর্দায় উপস্থিতি মানেই মিষ্টি হাসিতে দর্শকের মন ভুলানো অভিনয়। চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়ে বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী এই জনপ্রিয় নায়িকা। বছরান্তে দেশে ফিরে ছোট খাটো শ্যুটিং এ অংশ নিলেও চলচ্চিত্রে কাজ করেন না গুণী এই অভিনেত্রী। Continue reading

সুচরিতা

সুচরিতা শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন। তার আসল নাম বেবী হেলেন। শিশু শিল্পী হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বাবলু’। প্রধান নায়িকা হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্বীকৃতি’। এরপর তিনি ‘ডাকু মনসুর’, ‘আপনজন’, ‘মাস্তান’, তাল বেতাল’, ‘সমাধি’, ‘জানোয়ার’, ‘আলোর পথে’, ‘রঙ বেরং’, ‘স্মাগলার’, ‘গরমিল’, ‘মাটির মায়া’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘আসামী’, ‘মহেশ খালীর বাঁকে’, ‘কার পাপে’, ‘তুফান’, ‘নদের চাঁদ’, ‘ঘর সংসার’, ‘রাজকুমারী চন্দ্রবান’, ‘রূপের রানী চোরের রাজা’, ‘দি ফাদার’, ‘নাগরদোলা’, ‘কথা দিলাম’, ‘ছক্কা পাঞ্জা’, ‘লাল সবুজের পালা’, ‘সোনার তরী’, ‘কুদরত’, ‘বাঁধনহারা’, ‘ওস্তাদ সাগরেদ’, ‘দেনা পাওনা’, ‘কলমীলতা’, ‘জীবন নৌকা’, ‘মেঘ বিজলী বাদল’, ‘ফেরারী বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘মায়ের আঁচল’, ‘হাসনা হেনা’ প্রভৃতি।

তার স্বামী প্রযোজক ও প্রদর্শক কে এম আর মঞ্জুর। অভিনেত্রী বেবী রিটা তার বোন।

জসিম

জসিমের পরিচয় (Jasim) একাধিক। তিনি একজন অভিনেতা, একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং একজন মারপিট পরিচালক। বাংলাদেশী অ্যাকশন সিনেমাকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে জসিমের অবদান অনস্বীকার্য।

জসিম চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে। এই ছবিতে জসিম চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হলেও মূল পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের অভিনয় করে। ছবিটি অমিতাভ বচ্চন, আমজাদ খান অভিনীত হিন্দী সিনেমা ‘শোলে’র রিমেক। জসিম অভিনয় করেন আমজাদ খানের অভিনীত চরিত্রে। বলা হয়, এই চরিত্রটি করার জন্য জসিম প্রায় বিশ বার শোলে চলচ্চিত্রটি দেখেছিলেন। তার অভিনয় দেখে গব্বর সিং চরিত্রে রূপদানকারী আমজাদ খান প্রশংসা করেছিলেন বলে শোনা যায়। Continue reading

ওয়াসিম

ফোক ফ্যান্টাসি আর অ্যাকশন ধারার ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী ড্যাশিং হিরো ওয়াসিম। বর্তমানে চলচ্চিত্র থেকে দূরে অবস্থান করলেও চলচ্চিত্রের দর্শকমাত্রই তাকে এক নামে চিনেন। নতুন কোন ছবিতে অভিনয় না করলেও তার অভিনীত ছবি এখনো দর্শককে মুগ্ধ করে মন্ত্রের মত – ড্যাশিং হিরো হতে উৎসাহিত করে। একসময় এই হিরোর নামেই সিনেমাহল উপচে পড়ত, বক্স অফিস পরিপূর্ণ হয়ে উঠত। শতাধিক ছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিংবদন্তী অভিনেতার সারিতে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন অভিনেতা ওয়াসিম। Continue reading