বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে বহু বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসা অ্যানালগ সিস্টেমকে পরিবর্তন করে ডিজিটাল সিস্টেমকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সর্বাধিক ভূমিকা পালন করেছে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নাম জাজ মাল্টিমিডিয়া। শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটাল প্রজেকশন, ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মান, যৌথ প্রযোজনায় এবং বিগ বাজেটে চলচ্চিত্র নির্মান, নতুন মুখ উপস্থাপনকারী ইত্যাদি বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষিত করা যাবে যে প্রতিষ্ঠানকে তার নাম জাজ মাল্টিমিডিয়া। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে চলচ্চিত্র প্রযোজনা-পরিবেশনা-নির্মানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি।
বিএমডিবি-তে জাজ মাল্টিমিডিয়া নিয়ে সকল সংবাদ পাবেন এখানে
২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই আলোচনা এবং সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। সমগ্র বাংলাদেশে চারশ প্রেক্ষাগৃহকে ডিজিটাল করার ঘোষনা দিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে জাজ মাল্টিমিডিয়া। সিনেমার নির্মান যখন প্রতিবছর কমছে, এক দশকের ব্যবধানে বারোশ হল থেকে বন্ধ হতে হতে যখন মাত্র সাড়ে চারশ হলে এসে দাড়িয়েছে, তখন চারশ হলে ডিজিটাল প্রজেকশন পদ্ধতি চালু করার ঘোষনা বিস্ময়কর ছিল। সিনেমা নির্মানে তখন অ্যানালগ পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত। দেশের সিনেমা নির্মানে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বিএফডিসি-তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা নির্মানের কোন উপকরণ নেই, তাহলে কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে? এ প্রশ্নের উত্তরেও এগিয়ে এসেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। চলচ্চিত্র নির্মানে ডিজিটাল উপকরণ সরবরাহ করে দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরকে এফডিসি’র উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি দিয়েছে। পাশাপাশি পরিচালক শাহীন-সুমনের পরিচালিত ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবি নির্মানের মাধ্যমে জাজ মাল্টিমিডিয়া বাংলা চলচ্চিত্রের দুজন নতুন মুখ উপস্থাপন করেছে যারা বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত। একই ছবির মাধ্যমে ডিজিটাল বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মানের পথও দেখিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।
তবে আলোচনার পাশাপাশি সবসময় সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া। বিভিন্ন কারণে চিত্রনায়ক শাকিব খান, সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন, যুগান্তরের সাংবাদিক এফ আই দীপু, জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও শীষ মনোয়ারের ছোট ভাই এহতেশাম সায়ান্ত প্রভৃতি জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিপক্ষে পিস্তল প্রদর্শন এবং হত্যার হুমকী দেয়ার অভিযোগ করেছেন। এছাড়া, জাজ মাল্টিমিডিয়া কার্যালয়ের সামনে ছিনতাইকারী অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারা এবং জাজ মাল্টিমিডিয়ারই এক কর্মচারীকে হত্যা করে গুম করার অভিযোগে জাজ মাল্টিমিডিয়া বেশ সমালোচিত হয়। শেষোক্ত কারণে জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন সিইও শীষ মনোয়ারকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। অবশ্য, পরবর্তীতে শীষ মনোয়ার এবং জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজের মধ্যকার বিরোধ চরম আকারে ধারণ করে এবং শীষ মনোয়ারকে অপসারণ করে আলীমুল্লাহ খোকনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া ডিজিটাল প্রজেকশন সিস্টেমের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে একচেটিয়া প্রদর্শন ব্যবসায়ের অভিযোগও রয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিরুদ্ধে।
এত অভিযোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী মাত্রই স্বীকার করেন – এই দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন জাজ মাল্টিমিডিয়ার হাত ধরেই এগোচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের চলচ্চিত্র নির্মান, চলচ্চিত্রে নতুন মেধাবী মুখের উপস্থাপন এবং প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রমাণ করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া বাংলাদেশী চলচ্চিত্রেরই আরেক নাম।