আজিজুর রহমান

দেশের চলচ্চিত্র জগতের একজন খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে আজিজুর রহমান দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ৬০টিরও বেশি ছবি পরিচালনা করে বাংলা চলচ্চিত্রের জননন্দিত সফল চিত্র পরিচালক হিসেবে এ উপমহাদেশে স্থান করে নেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি এ পর্যন্ত তিনি ১০টির মত ছবি নিজে প্রযোজনা করেছেন।

১৯৩৯ সালে তিনি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন শহরের কলসা সাঁতাহার মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম রুপচাঁন প্রামানিক। তিনি স্থানীয় আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পাস ও ঢাকা সিটি নাইট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর চারুকলা আর্ট ইনস্টিটিউটে কমার্সিয়াল আর্টে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৫৮ সালে খ্যাতিমান পরিচালক এতেহশামের সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহ লোকাগাঁথা কাহিনী নিয়ে সাইফুল মুল্‌ক্‌ বদিউজ্জামাল 0নামে প্রথম ছবি পরিচালনা করেন।

এ পর্যন্ত তিনি অর্ধশতাধিক ছবি পরিচালনা করেছেন। তার পরিচালনা ছবিগুলো হলো সমাধান, স্বীকৃতি, গরমিল, অপরাধ, অগ্নিশিখা, লাল কাজল, দিল, অশিক্ষিত, মাটির ঘর, জনতা এক্সেপ্রস, ছুটির ঘন্টা, ও ঘরে ঘরে যুদ্ধ। তার পরিচালিত ছবির মধ্যে অশিক্ষিত, ছুটির ঘন্টা, লাল কাজল ও মাটির ঘর ছবি ব্যাপক ব্যবসাসফল ছবি হিসাবে বিবেচিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য তিনটি ছবি অশিক্ষিত, ছুটির ঘন্টা মস্কোতে, জনতা এক্সেপ্রস তাসখন্দে এবং ছুটির ঘন্টা রুমানিয়াতে প্রদর্শিত হয়। বাংলা ছবির পরিচালনার পাশাপাশি চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান মেরে আরমান মেরে স্বপ্নে, সাত সেহেলী, বস্তির রানী, পরদেশে রেহেনে দো উর্দু ছবি পরিচালনা করেন। এছাড়া তিনি ভারতে বেশ কিছু বাংলা ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন।

ফেসবুক প্রোফাইল: Azizur Rahman

আখতারুজ্জামান

আখতারুজ্জামান চলচ্চিত্রে আসেন ১৯৮৪ সালে ফেরারী বসন্ত (যৌথভাবে) ছবি পরিচালনার মাধ্যমে। তার পরিচালিত অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে প্রিন্সেস টিনা খান, নগ্ন আগন্তুক, পোকামাকড়ের ঘর-বসতি ইত্যাদি। এছাড়া তিনি পিঞ্জর, রক্ত পলাশ, ফকির মজনু শাহসহ অসংখ্য ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি সাংবাদিক, শিক্ষক, গীতিকার ও সংলাপ রচয়িতা হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে।

মৃত্যুর পূর্বে তিনি ‘সূচনা রেখার দিকে’। রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত এ ছবিটি ভবিষ্যত কি এখনো নিশ্চিত না। তার এই ছবিতে ছবিতে ওপার বাংলা-এপার বাংলার মানুষদের মিলনাকাঙ্ক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু, সীমান্ত সংঘর্ষ, বাউল আর অবিভক্ত নদীর পানিবণ্টনসহ বাঙালির জাতিগত সমস্যা উঠে এসেছে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

অঞ্জনা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে অঞ্জনা বহুল আলোচিত একটি নাম। দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি ৩৫০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় , কত্থক নৃত্য ও মডেলিং এই তিনটিতেই রয়েছে তার সফল বিচরণ। এর পাশাপাশি অঞ্জনা একজন সংগীতশিল্পীও।

মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করেছিলেন অঞ্জনা। নাচ নিয়ে ব্যস্ততার সময়ই মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। সারথী পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’ ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রজীবন শুরু হয়। আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অঞ্জনা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

অঞ্জনা নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে ৩০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে অশিক্ষিত, রজনীগন্ধা, আশার আলো, জিঞ্জির, আনারকলি, বিধাতা, বৌরানী, সোনার হরিণ, মানা, রামরহিমজন, সানাই, সোহাগ, মাটির পুতুল, সাহেব বিবি গোলাম ও অভিযান উল্লেখযোগ্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হল মাটির মায়া, রূপালি সৈকতে, মোহনা, গুনাই বিবি, গাংচিল, রাজবাড়ী, নূরী, সুখের-সংসার, অন্ধবধূ, যাদু নগর।

তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘প্রাণ সজনী’, ‘দেশ-বিদেশ’, ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘নেপালি মেয়ে’সহ একাধিক ছবি নির্মিত হয়েছে।

অঞ্জনার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন ঢাকা ব্যাংক কোয়ার্টারে। তার পৈতৃক নিবাস চাঁদপুর। শুরুতে তিনি ‘অঞ্জনা রহমান’ নামে পর্দায় কাজ করলেও বর্তমানে তিনি অঞ্জনা সুলতানা নামেই সমধিক পরিচিত।

অঞ্জু ঘোষ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে অঞ্জু ঘোষ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গানও গাইতেন। ১৯৮২ সালে এফ, কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল ছিল। তিনি বাংলার নীলো নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাতারাতি তারকা বনে যান। অনেকের মতে অঞ্জুর সাফল্য ছিল ভিত্তিহীন মৌলিক সাফল্য। অঞ্জু বাণিজ্যিক ছবির তারকা হিসেবে যতটা সফল ছিলেন সামাজিক ছবিতে ততটাই ব্যর্থ হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর ক্যারিয়ার বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও তিনি ফিরে আসেন ভালোভাবে। ১৯৮৭ সালে অঞ্জু সর্বাধিক ১৪টি সিনেমাতে অভিনয় করেন মন্দার সময়ে যেগুলো ছিল সফল ছবি। তাঁর অভিনীত বেদের মেয়ে জোছনা অবিশ্বাস্য রকমের ব্যবসা করে এবং সৃষ্টি করে নতুন রেকর্ড। তিনি সুঅভিনেত্রীও ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনের আগমনে তিনি ব্যর্থ হতে থাকেন। তিনি এই দেশ ছেড়ে চলে যান এবং কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে থাকেন। বর্তমানে তিনি ভারতে বিশ্বভারতী অপেরায় যাত্রাপালায় অভিনয় করছেন।

অঞ্জু ঘোষ বিয়ে করেছিলেন পরিচালক এফ কবীর চৌধুরীকে। বিয়ের পর প্রথমদিকে অস্বীকার করেছিলেন তারা। এফ কবীরের সাথে তার বিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকেনি, বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

অলিভিয়া

১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন অলিভিয়া। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের রক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যের বাইরে প্রথম অভিনয় করেছিলেন অলিভিয়া। নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে তাঁর জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অলিভিয়া অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘মাসুদ রানা’, ‘দ্য রেইন’, ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘পাগলা রাজা’, ‘বাহাদুর’, ‘শাহজাদী’, ‘গুলবাহার’, ‘বেদ্বীন’, ‘শ্রীমতি ৪২০’, ‘চন্দ্রলেখা’, ‘টক্কর’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘ডার্লিং’, ‘রাস্তার রাজা’, ‘বন্ধু’, ‘লাল মেমসাহেব’, ‘তকদিরের খেলা’, ‘সতীনাথ কন্যা’, ‘ভাইবোন’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘জংলি রাণী’, ‘জামানা’, জীবন সংগীত’, ‘শপথ নিলাম’, ‘টাকার খেলা’, ‘দূর থেকে বলছি’, ‘সেয়ানা’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘শাপমুক্তি’, ‘একালের নায়ক’, ‘কুয়াশা’, ‘আগুনের আলো’, ‘কালা খুন’, ‘আগুন পানি’ ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘দুশমনি’।

অলিভিয়ার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। দেশভাগের পর অলিভিয়ার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশে) চলে আসে। ওই সময় পরিবারটি ঢাকার মগবাজারে ইস্পাহানি কলোনির গলিতে বসবাস করত। খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল ভারতের গোয়ায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অলিভিয়া হোটেল পূর্বাণীতে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই ও চার বোন। এক বোন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারহোস্টেস ছিলেন। আরেক বোন কলকাতায় থাকতেন। বাবা বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার রিডিং সেকশনে কাজ করতেন। ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করা অলিভিয়া মাত্র ১৪ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন। তখন একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। তিনি ৫৩টি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

আনোয়ার পারভেজ

আনোয়ার পারভেজ একজন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি অভিনেতা ও গায়ক জাফর ইকবাল এবং গায়িকা শাহনাজ রহমতউল্লাহর বড় ভাই।

অনন্য মামুন

অনন্য মামুন চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন কাহিনীকার আবদুল্লাহ জহির বাবুর সহকারী হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি নিজেই কাহিনীকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অনন্ত প্রযোজিত মোস্ট ওয়েলকাম ছবির মাধ্যমে অনন্য মামুন তার পরিচালনা অধ্যায় শুরু করেন।

অনন্য মামুন ঢাকা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস সম্পন্ন করেছেন।

অন্তরা

অন্তরা ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে। এরপর তিনি ‘বালিকা হল বধূ’, ‘প্রেমের সমাধি’, ‘সুপারম্যান’, ‘গরীবের অহংকার’ ছবিতে অভিনয় করেন।