সুজাতা (Sujata) ফোক সম্রাজ্ঞী হিসেবে খ্যাত কারণ তিনি প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন যার মধ্যে পঞ্চাশটিরও বেশী ফোক ঘরানার চলচ্চিত্র। সুজাতা একজন অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক।
সুজাতা প্রথম রূপালী পর্দায় উপস্থিত হন ওবায়দুল হক দুই দিগন্ত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সেখানে তিনি একটি নৃত্য দৃশ্যে অংশ নিয়েছিলেন মাত্র। তারপর তিনি ধারাপাত চলচ্চিত্রে সহনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে সুজাতা নাটক ও থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেইসময় নারায়ণ চক্রবর্তী, নাজমুল হুদা বাচ্চু, আমজাদ হোসেনসহ আরও অনেকের নির্দেশনায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন তিনি। একসময় আমজাদ হোসেনই পরিচালক সালাহউদ্দিনের সাথে। সালাহউদ্দিন তার নাম চন্দ্রা মজুমদার থেকে পরিবর্তন করে সুজাতা নামে ধারাপাত চলচ্চিত্রে উপস্থিত করেন।
একক নায়িকা হিসেবে সুজাতা প্রথম অভিনয় করেন কাজী খালেক পরিচালিত ‘মেঘ ভাঙা রোদ’ চলচ্চিত্রে। তবে এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির আগেই একক নায়িকা হিসেবে অভিনীত ছবি ‘রূপবান’ মুক্তি পায়।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সংযোজন রূপবান সুজাতার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। রূপবানে অভিনয়ের পূর্বে তার ইচ্ছে ছিল থিয়েটারে অভিনয়ের মাঝে চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন। কিন্তু রূপবানের সাফল্যে তার আর থিয়েটারে ফিরে যাওয়া হয় নি। রূপবান চলচ্চিত্রটি এতটাই দর্শক সমাদৃত হয় যে সে সময় মফস্বলের কোন কোন সিনেমাহলে রূপবান একটানা এক বছর ধরে চলেছিল।
সুজাতা ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রায় সত্তরটি ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপর তিনি প্রায় একযুগ চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন। বর্তমানে সুজাতা ছোট এবং বড় উভয় পর্দায়ই অভিনয় করছেন।
গিরিজানাথ মজুমদার ও বীণা পানি মুজমদারের সন্তান সুজাতার জন্ম ও বেড়ে উঠা কুষ্টিয়ায়। পঞ্চাশের দশকে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার সময় পরিবারসহ কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। তারপরই সুজাতা নাটক ও থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ডাকবাবু চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সুদর্শন নায়ক অভিনেতা আজিমের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সুজাতা এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আজিমের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুজাতা ভগবতি ব্যানার্জি রোডে স্বামীর সঙ্গে সংসার করে গেছেন।
সুজাতা ও আজিম একত্রে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। তাদের প্রযোজনা সংস্থাগুলো হচ্ছে ‘সুজাতা প্রোডাকশন্স’, ‘এস এ ফিল্মস’ ও ‘সুফল কথাচিত্র’। এই তিনটি প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘চেনা অচেনা’, ‘টাকার খেলা’, ‘প্রতিনিধি’, ‘অর্পন’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘বদলা’, ‘রং বেরং’, ‘এখানে আকাশ নীল’ ইত্যাদি সিনেমা। সুজাতা একটি মাত্র চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন – নাম অর্পন। চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন শাখায় একাধিক জাতীয় পুরস্কার লাভ করে।
বর্তমানে চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দিলেও ছোট পর্দার নাটকে প্রায় নিয়মিত অভিনয় করছেন রূপবান-কন্যা সুজাতা। পাশাপাশি সংসার-সন্তান নিয়ে কাটছে তার জীবনের নানা রঙের দিনগুলো।