জ্যোতিকা জ্যোতি (Jyotika Jyoti) একজন টিভি এবং চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী। এছাড়া তিনি উপস্থাপনাতেও নাম লিখিয়েছেন। তিনি ২০০৪ সালে লাক্স-আনন্দধারা ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় সেরা দশে স্থান করে নিয়েছিলেন।
জ্যোতির বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করার পর তার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেবার কথা ছিল। মাস্টার্সে থাকতেই যোগ দেন ময়মনসিংহের বহুরূপী থিয়েটারে। তবে এ নাট্যদলের হয়ে মঞ্চে ওঠার সুযোগ হয়নি তাঁর। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহনের পরিবর্তে অভিনয়ের নেশা পেয়ে বসে তাকে। সারাহ বেগম কবরীর ‘আয়না’ ছবিতে সুযোগ পান। এরপর থেকে অভিনয়ই তার ধ্যান-জ্ঞান।
প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ”আমি তখন ময়মনসিংহ শহরে থিয়েটার চর্চা শুরু করেছি। সেখানে একটি শুটিং ইউনিট যায়। ওই দলের একজন আমাকে জানান, কবরী আপা নতুন ছবি শুরু করতে যাচ্ছেন; তুমি চাইলে ছবি পাঠাতে পার। আমি ছবি পাঠালাম; এবং নির্বাচিত হলাম।’
‘আয়না’র পর মুক্তি পায় বেলাল আহমেদের ‘নন্দিত নরকে’ এবং তানভীর মোকাম্মেলের ‘রাবেয়া’। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তানভীর মোকাম্মেলের ‘জীবনঢুলি’ ও আজাদ কালামের ‘বেদেনী’ চলচ্চিত্র দুটি। জ্যোতি অভিনীত প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির নাম ছিল ‘ব্রেক আপ’। ২০১০ সালের শুরুর দিকে ‘ব্রেক আপে’ অভিনয় করেছিলেন তিনি।
প্রথম সিনেমায় অভিনয় করে জ্যোতি দর্শকের নজর কাড়েন।এরপর এক এক করে নূরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ, সালাউদ্দিন লাভলুসহ আরও অনেক মেধাবী পরিচালকের সাথে কাজের সুযোগ পান। আর অনিমেষ আইচের ‘একটি ঝড়াক্রান্ত শেফালী গাছ’ নাটকে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। তার অভিনীত এক পর্বের নাটকের মধ্যে শতাব্দি জাহিদের ‘স্বপ্নবুনন’, রনির ‘জাগরণের রংটা ধূসর ছিলো’, রাসেল আজমের ‘মুক্তাহীন ঝিনুক’, নজরুল কোরেশীর ‘ভালোবাসার লাল পিঁপড়া’, দিমা নেফার তিতির ‘স্বপ্ন দেখার সাহস’, ইশতিয়াক মাহমুদের ‘মুক্তি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শুধু এক ঘন্টার নাটক নয় এর ফাঁকে বেশ কিছু নতুন ধারাবাহিক নাটকেরও কাজ করেছেন জ্যোতি। অনন্ত হীরার ‘স্বপ্নের পাঠশালা’ জ্যোতির প্রথম টিভি নাটক। তবে আলোচনায় আসেন ‘মোহনা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে। ফজলুর রহমানের ‘সময়ের হাতঘড়ি’, হাবিব মাসুদের ‘বেলা অবেলা’, অরণ্য আনোয়ারের ‘কর্তাকাহিনী’, সাঈদ তারেকের ‘স্বপ্নবিলাস’, ইমরান ইমুর ‘কুটুম পাখি’ ইত্যাদি তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটক।
২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে এক সাক্ষাতকারে চলচ্চিত্রে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিনেমা অনেক বড় মাধ্যম। আমি নিয়মিত সিনেমায় কাজ করতে চাই। চরিত্রের প্রয়োজনে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করতে আমার আপত্তি নেই। তবে সেটা শৈল্পিক হতে হবে এবং পরিচালককে অবশ্যই মেধাবী হতে হবে।’
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির চিন্তাভাবনার সবটুকু যে নাটক-সিনেমাকেন্দ্রিক, তা কিন্তু নয়। তিনি বেশ সমাজসচেতন একজন মেয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা উচ্চারিত হয়েছে তাঁর কণ্ঠে, দেশ, মানুষ এবং রাজনীতি নিয়ে তিনি সচেতন। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে আন্দোলনে জ্যোতিকা জ্যোতি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আলোচনায় আসেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী কর্মসূচির শুরুর দিনেই জামায়ত-শিবিরের রোষানলে পড়েছিলেন অভিনেত্রী তিনি। এছাড়া রুমি স্কোয়াডের দাবীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে ৩৬ ঘন্টার অনশন করেন জ্যোতি।
*জন্মসালটি সঠিক নয়।