সূর্য দীঘল বাড়ী নিয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিত্রসমালোচনা

Surjo Dighal Bari 1সূর্য দীঘল বাড়ী উপন্যাস লিখেছিলেন আবু ইসহাক। মসিহউদ্দিন শাকের এবং শেখ নিয়ামত আলী সম্মিলিত ভাবে এই উপন্যাসকে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়েছেন ১৯৭৯ সালে। চলচ্চিত্র মুক্তির পর ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘চলচ্চিত্র পত্র’ এই চলচ্চিত্রের উপর একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে। এতে কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে সমালোচনা প্রকাশিত হয় যার উল্লেখযোগ্য অংশ অনুপম হায়াৎ রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস’ গ্রন্হ থেকে বিএমডিবির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। 

সূর্য দীঘল বাড়ী আমাদের চলচ্চিত্রে একচ্ছত্র দাপটে প্রতিষ্ঠিত ন্যাকা, ছ্যাবলা ও নকলবাজে গিজগিজ করা বাড়িঘর কাপাঁবার জন্য প্রথম প্রকৃত আঘাত। এর আগে ভালো ছবি তৈরীর চেষ্টা আরো কয়েকবার হয়েছে, কিন্তু এরকম একনিষ্ঠ ও সর্বাঙ্গীন সৎ প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় নি। এখানে দ্যাখা গেলো যে ছবির নির্মাতাগণ দর্শকদের কেবল প্রথম রিপুতাড়িত মাংসপিণ্ড মনে করেন না। কিংবা তাদের নিচুমানের বুদ্ধিবৃত্তির লঘুস্বভাব মানুষ বলেও গণ্য করা হয় নি। তাই সংক্ষিপ্ত বেশবাস সত্ত্বেও গ্রামের দরিদ্র তরুণীর প্রতি দর্শকদের স্বাভাবিক সম্ভ্রমবোধ নষ্ট হয় না। অথবা এই ছবি দেখতে দেখতে স্বজনক্ষমতাশূন্য মহাপণ্ডিতের ইন্টেলেকচুয়াল জ্যাঠামো সহ্য করার দরকার নেই। আমাদের স্বাভাবিক মানববৃত্তির ওপর এরকম আস্থাবান কোন ভদ্রলোক আমাদের দেশে এর আগে কখনো ছবি তৈরী করেন নি। আমাদের ওপর এই আস্থা স্থাপনের জন্য দর্শকদের পক্ষ থেকে তাঁদের সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানাই। Continue reading

স্মৃতিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ সমালোচনা

Surjo Dighal Bariসূর্য দীঘল বাড়ি ১৯৭৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে মুক্তি পায়। ১৯৮০ সালের ১২ জানুয়ারী সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় স্মৃতিময় বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম এই চলচ্চিত্রের সমালোচনা লিখেন। অনুপম হায়াৎ রচিত ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস’ বই থেকে সমালোচনার অংশ বিশেষ বিএমডিবি-র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

সূর্য দীঘল বাড়ি। আবু ইসহাক রচিত ছবি। জনচিত্রায়ন প্রযোজিত ছবি। শাওন-সাগর পরিবেশিত ছবি। সরকারী অনুদান মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি। মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নেয়ামত আলী পরিচালিত ছবি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মনন্তর পার হওয়া তদানীন্তন একটা দেশের একটা গাঁয়ের ছবি। যে ছবিতে সবুজ মাঠ ও কাঁশবন, নারকেল-কলা-তালগাছ, নৌকা ও কচুরীপানা, পুকুর ও জিলাবাঁধা বরশী হাঁস ও মুরগী, ব্যাঙ ও ঝিঝির ডাক, কিত্ কিত্ ও কাবাডি খেলা, ছাগল-গরু ও গোবর চড়কি মেলা ও ভেজা কাঁথা, হোকজোর টান ও রোদে বসে তেল মাখা, চালের চোরা কারবার ও চালের জন্য হাহাকার, হিজল তমালের সারি, ঘুঘু কোকিলের ডাকাডাকি, মসজিদে আজান ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এবং সর্বোপরি মানুষ। গাঁয়ের শক্তিমান ও শক্তিহীন মানুষ! অত্যাচার ও অত্যাচারিত মানুষের হাহাকার! শতাব্দীর লাঞ্ছিত ইতিহাস, বাংলার গ্রামের ইতিকথা নকশী কাঁথার মতোই সূর্য দীঘলের সর্বাঙ্গে জড়ানো। এ ছবি নিকট দূরে অনুষ্ঠিতব্য বার্লিন কিংবা যে কোন প্রতিযোগিতা থেকে পুরস্কার ছিনিয়ে আনলে একটুও অবাক হবো না। কারণ বেদনার্ত মানুষের কথা সততার সঙ্গে বলেও সত্যজিৎ কান চিত্রোৎসব থেকে জয়ের মালা গ্রহণ করেছিলেন। Continue reading

মুখোশের আড়ালে মুখ ও মুখোশ

aGwL82Zসাদৃশ্য বিবেচনায়, যে কোন সিনেমাই মুখোশধারী মুখ। এর আড়ালে থাকে শত বঞ্চনা, কষ্ট, পরিশ্রম, সম্মিলিত প্রচেষ্টা, উদ্যোগ, মমতার মত বিভিন্নমুখী বিশেষণ। ‘মুখ ও মুখোশ‘ চলচ্চিত্রটি যদি মুখোশ হয়, তবে এর আড়ালেও রয়েছে একটি মুখ যা সবসময় তার মুখোশের আড়ালেই থেকে যায়। মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রের মুখোশের আড়ালে রয়েছে নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাত, সহযোগিতা-বঞ্চনা, ভালোবাসা-দৃঢ়তার ছাপ। এই সব কিছুই একটি ইতিহাস তৈরীতে সাহায্য করেছে – অনেকগুলো মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল এই অঞ্চলে। ৫৬ বছর পরে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মানের ইতিহাসকে রূপকথা বলে ভ্রম হতে পারে। জেনে নেয়া যাক রূপকথার ন্যায় সেই ইতিহাস। Continue reading

বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০১৩

Saltamami 2013বাংলাদেশে নির্বাচনের বছর সবসময়ই গোলযোগপূর্ণ, ২০১৩-ও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে রাজনৈতিক গোলযোগের পাশাপাশি বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে ভারতীয় চলচ্চিত্রের আমদানী উদ্যোগ দুর্যোগের মেঘ হিসেবে সবসময় উপস্থিত থেকেছে। এই দুর্যোগপূর্ণ বছরের শেষ মাসে কোন চলচ্চিত্র মুক্তি পায় নি এবং মুক্তির নির্দিষ্ট তারিখ থেকে পিছিয়ে আগামী বছরে নির্বাচন পরবর্তী শান্ত সময়ে ছবি মুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে নির্মাতাগোষ্ঠী। এ বছরে আর কোন ছবি মুক্তি পাবে না ধরে নিয়ে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রসমূহের দিকে ফিরে তাকালে গোটা বছরের একটা চিত্র ফুটে উঠে, এবং, রাজনৈতিক গোলযোগের মাঝেও এই চিত্রের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকানো উচিত। বলা বাহুল্য, এক দশক আগের অবহেলা আর দূর্ণীতির কারণে সৃষ্ট পতিত অবস্থা থেকে উন্নয়নের দিকে বাংলা চলচ্চিত্রের যাত্রাকে শিখর পর্যন্ত পৌছানো নিশ্চিত করতে হলে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রসমূহের বিচার বিশ্লেষন আবশ্যক; বাংলা চলচ্চিত্রের সালতামামি ২০১৩ এক্ষেত্রে কিছুটা সহায়তা করতে পারে। Continue reading

বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থানে ‘রূপবান’

1
ষাট এর দশকে বাংলাদেশে আব্দুল জাব্বারে পদাঙ্ক অনুসরন করে অনেক নির্মাতা বাংলা চলচ্চিত্র নির্মানে এগিয়ে আসেন। পরিচ্ছন্ন ও সমাজ সচেতনমুলক সিনেমা ‘এদেশ তোমার আমার’, ‘ধারাপাত’, ‘যে নদী মরু পথে’, ‘রাজধানীর বুকে, ‘হারানো দিন’ ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সুতরাং’, ‘নদী ও নারী’ প্রশংসিত হলেও তা বানিজ্যিক ভাবে লাভবান হতে পারছিল না। Continue reading

কবরীর কথা..

এক.

kobori07-600x330অভিনয়ের পঞ্চাশ বছর পার করছেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। তিনি মিষ্টি হাসির মেয়ে নামে পরিচিত।বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তার আলাদা স্থান রয়েছে। এটাই স্বাভাবিক যে, তার অভিনয় প্রতিভা নিয়ে খুব একটা কথা শোনা যায় না।  সাদামাটা চেহারার এমন সিগ্ধ হাসি আছেই বা কয় জনের। সেই উদাহরণে পরে আসি।

বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকা প্রসঙ্গে আসলে আরো দুইজনের কথা বলতে হয়। আসলে এমন হতে পারে এই দুইজনের প্রভাবে কবরীর আলাদা অবস্থানটা চোখের আড়ালেই থেকে গেছে। কিন্তু সেই বলয়ের বাইরে কবরীর সংগোপন আলাদা একটা অবস্থান ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। Continue reading

[ট্রেলার] পিপড়া বিদ্যা

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘পিঁপড়া বিদ্যা‘ চলচ্চিত্রের প্রথম ট্রেলার। এতে অভিনয় করেছেন শিনা চৌহান, নূর ইমরান মিঠু, মুকিত জাকারিয়া প্রমুখ।

মুভি রিভিউ: চার সতীনের ঘর

চার সতীনছুটির অবসরে দেখে ফেললাম বাংলা মুভি ‘চার সতীনের ঘর’ হাজারো জমকালো মুভির মাঝে এই মুভি হয়তো কিছুই না। তবু দেশীয় মুভি বলে কথা। বিনোদন প্রিয় মানুষ হিসেবে আমার প্রধান বিনোদন ঘুরে বেড়ানো, বই পড়া আর মুভি দেখা। বাইরে কুত্তা-বিলাই বৃস্টি থাকায় মুভি দেখেই আজকের বিনোদন সম্পূর্ণ করা আর কি। Continue reading