অঞ্জনা

‏বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে অঞ্জনা বহুল আলোচিত একটি নাম। দীর্ঘ ৪০ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি ৩৫০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। অভিনয় , কত্থক নৃত্য ও মডেলিং এই তিনটিতেই রয়েছে তার সফল বিচরণ। এর পাশাপাশি অঞ্জনা একজন সংগীতশিল্পীও।

মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করেছিলেন অঞ্জনা। নাচ নিয়ে ব্যস্ততার সময়ই মাসুদ পারভেজ সোহেল রানার হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। সারথী পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’ ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রজীবন শুরু হয়। আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে অঞ্জনা সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

অঞ্জনা নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে ৩০টি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে অশিক্ষিত, রজনীগন্ধা, আশার আলো, জিঞ্জির, আনারকলি, বিধাতা, বৌরানী, সোনার হরিণ, মানা, রামরহিমজন, সানাই, সোহাগ, মাটির পুতুল, সাহেব বিবি গোলাম ও অভিযান উল্লেখযোগ্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হল মাটির মায়া, রূপালি সৈকতে, মোহনা, গুনাই বিবি, গাংচিল, রাজবাড়ী, নূরী, সুখের-সংসার, অন্ধবধূ, যাদু নগর।

তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘প্রাণ সজনী’, ‘দেশ-বিদেশ’, ‘লাভ ইন সিঙ্গাপুর’, ‘নেপালি মেয়ে’সহ একাধিক ছবি নির্মিত হয়েছে।

অঞ্জনার জন্ম ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন ঢাকা ব্যাংক কোয়ার্টারে। তার পৈতৃক নিবাস চাঁদপুর। শুরুতে তিনি ‘অঞ্জনা রহমান’ নামে পর্দায় কাজ করলেও বর্তমানে তিনি অঞ্জনা সুলতানা নামেই সমধিক পরিচিত।

অঞ্জু ঘোষ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে অঞ্জু ঘোষ ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গানও গাইতেন। ১৯৮২ সালে এফ, কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল ছিল। তিনি বাংলার নীলো নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাতারাতি তারকা বনে যান। অনেকের মতে অঞ্জুর সাফল্য ছিল ভিত্তিহীন মৌলিক সাফল্য। অঞ্জু বাণিজ্যিক ছবির তারকা হিসেবে যতটা সফল ছিলেন সামাজিক ছবিতে ততটাই ব্যর্থ হন। ১৯৮৬ সালে তাঁর ক্যারিয়ার বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও তিনি ফিরে আসেন ভালোভাবে। ১৯৮৭ সালে অঞ্জু সর্বাধিক ১৪টি সিনেমাতে অভিনয় করেন মন্দার সময়ে যেগুলো ছিল সফল ছবি। তাঁর অভিনীত বেদের মেয়ে জোছনা অবিশ্বাস্য রকমের ব্যবসা করে এবং সৃষ্টি করে নতুন রেকর্ড। তিনি সুঅভিনেত্রীও ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনের আগমনে তিনি ব্যর্থ হতে থাকেন। তিনি এই দেশ ছেড়ে চলে যান এবং কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে থাকেন। বর্তমানে তিনি ভারতে বিশ্বভারতী অপেরায় যাত্রাপালায় অভিনয় করছেন।

অঞ্জু ঘোষ বিয়ে করেছিলেন পরিচালক এফ কবীর চৌধুরীকে। বিয়ের পর প্রথমদিকে অস্বীকার করেছিলেন তারা। এফ কবীরের সাথে তার বিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকেনি, বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

অলিভিয়া

১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফির ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করেন অলিভিয়া। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের রক্ষণশীল বৈশিষ্ট্যের বাইরে প্রথম অভিনয় করেছিলেন অলিভিয়া। নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে তাঁর জুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অলিভিয়া অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে ‘মাসুদ রানা’, ‘দ্য রেইন’, ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘পাগলা রাজা’, ‘বাহাদুর’, ‘শাহজাদী’, ‘গুলবাহার’, ‘বেদ্বীন’, ‘শ্রীমতি ৪২০’, ‘চন্দ্রলেখা’, ‘টক্কর’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘ডার্লিং’, ‘রাস্তার রাজা’, ‘বন্ধু’, ‘লাল মেমসাহেব’, ‘তকদিরের খেলা’, ‘সতীনাথ কন্যা’, ‘ভাইবোন’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘জংলি রাণী’, ‘জামানা’, জীবন সংগীত’, ‘শপথ নিলাম’, ‘টাকার খেলা’, ‘দূর থেকে বলছি’, ‘সেয়ানা’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘শাপমুক্তি’, ‘একালের নায়ক’, ‘কুয়াশা’, ‘আগুনের আলো’, ‘কালা খুন’, ‘আগুন পানি’ ইত্যাদি। তাঁর অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ‘দুশমনি’।

অলিভিয়ার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। দেশভাগের পর অলিভিয়ার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তান ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশে) চলে আসে। ওই সময় পরিবারটি ঢাকার মগবাজারে ইস্পাহানি কলোনির গলিতে বসবাস করত। খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল ভারতের গোয়ায়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অলিভিয়া হোটেল পূর্বাণীতে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই ও চার বোন। এক বোন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারহোস্টেস ছিলেন। আরেক বোন কলকাতায় থাকতেন। বাবা বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার রিডিং সেকশনে কাজ করতেন। ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করা অলিভিয়া মাত্র ১৪ বছর বয়সে মডেলিং শুরু করেন। তখন একাধিক বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। তিনি ৫৩টি ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এম শফিকে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

আনোয়ার পারভেজ

আনোয়ার পারভেজ একজন প্রখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি অভিনেতা ও গায়ক জাফর ইকবাল এবং গায়িকা শাহনাজ রহমতউল্লাহর বড় ভাই।

অনন্য মামুন

অনন্য মামুন চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন কাহিনীকার আবদুল্লাহ জহির বাবুর সহকারী হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি নিজেই কাহিনীকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অনন্ত প্রযোজিত মোস্ট ওয়েলকাম ছবির মাধ্যমে অনন্য মামুন তার পরিচালনা অধ্যায় শুরু করেন।

অনন্য মামুন ঢাকা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস সম্পন্ন করেছেন।

অন্তরা

অন্তরা ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে তার অভিষেক ঘটে ‘পাগল মন’ ছবি দিয়ে। এরপর তিনি ‘বালিকা হল বধূ’, ‘প্রেমের সমাধি’, ‘সুপারম্যান’, ‘গরীবের অহংকার’ ছবিতে অভিনয় করেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন

ইলিয়াস কাঞ্চন (Ilias Kanchan) বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের অন্যতম শক্তিমান অভিনেতা। ১৯৭৭ সালে বসুন্ধরা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। চলচ্চিত্র অভিনেতা ছাড়াও তার দুটি পরিচয় হল চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। Continue reading

শাবনূর

পরিচালক এহতেশাম এর হাত ধরে ‘চাঁদনি রাতে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে যাত্রা শুরু করেন শাবনূর (Shabnur). প্রায় একই সময়ে যাত্রা শুরু করা সালমান শাহ‘র সাথে জুটিবন্ধ হয়ে একের পর এক ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন শাবনূর। সালমান শাহ’র মৃত্যুর পরেও তার সেই অগ্রযাত্রা বন্ধ হয় নি। মান্নারিয়াজ, শাকিল, ফেরদৌস সহ বিভিন্ন নায়কের সাথে জুটি বেধে সফল ছবি উপহার দিয়েছেন শাবনূর। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনবার বাচসাস পুরস্কার এবং রেকর্ড সংখ্যক ১০বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জয় করেছেন।  Continue reading

আবুল হায়াত

আবুল হায়াত একজন অভিনেতা, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং প্রকৌশলী। এক হাজারেরও বেশী টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। তিনি মঞ্চ, রেডিও, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

মাত্র দশ বছর বয়সে প্রথম নাটকে অভিনয় করেন আবুল হায়াত – টিপু সুলতান নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন। আরও আগে থেকেই রেলওয়ে কর্মকর্তা বাবার কারণে নিয়মিত মঞ্চ নাটক দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সাল থেকে নিয়মিত টেলিভিশনে অভিনয় করে যাচ্ছেন আবুল হায়াত। তখন মাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন তিনি, ঢাকায় মেসে থাকতেন। এসময় তিনি জানতে পারেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় গ্রুপ থিয়েটারের একটি নাটক তৈরী হবে যা টেলিভিশনে দেখানো হবে। আমেরিকা থেকে নাটকের উপর মাস্টার্স করে আসা জিয়া হায়দার সেই নাটকের নির্দেশনা দেবেন। নাটকের নাম ইডিপাস। এর মাধ্যমেই টেলিভিশনে নাটকের যাত্রা শুরু করেন আবুল হায়াত।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতি খুব বেশী মনযোগ দেন নি বলেই চলচ্চিত্রে সফল হন নি – এমনটা মনে করেন আবুল হায়াত। ১৯৭২ সালে ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে আগমন করেন। সাধারণত ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

আবুল হায়াত অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মাঝে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে থাকেন। দৈনিক প্রথম আলো-তে তার কলামের নাম ‘এসো নীপবনে’। ১৯৯১ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় যার নাম ‘আপ্লুত মরু’। তার প্রকাশিত গ্রন্হের মধ্যে রয়েছে নির্ঝর সন্নিকটে, এসো নীপবনে (তিন খন্ড), জীবন খাতার ফুটনোট (২পর্ব), অচেনা তারা, হাঁসুলি বেগমের উপকথা, মধ্যাহ্নভোজ কি হবে ?, জিম্মি ইত্যাদি।

আবুল হায়াতের পূর্বপুরুষের বাসস্থান মুর্শিদাবাদে। ১৯৪৭ সালে তার পরিবার এদেশে চলে আসে। আবুল হায়াতের জন্ম মুর্শিদাবাদে হলেও শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের কিয়দাংশ কেটেছে চট্টগ্রামে। আবুল হায়াতের বাবা আব্দুস সালাম ছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটের সাধারন সম্পাদক। স্কুল জীবন কাটে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট ও রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মেটৃকুলেশন (বর্তমান এসএসসি) পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ১৯৬২ সালে বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটে পড়ার সময় তিনি শেরেবাংলা হলে থাকতেন। এরপর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৯৬৭ সালে পাস করে ১৯৬৮ সালেই ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে যোগ দেন।

প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও তার ধ্যান জ্ঞান ছিল অভিনয়ে। মূলত অর্থনৈতিক কারণেই প্রকৌশলী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি ১৯৭৮ সালে লিবিয়ায় তিন বছর চাকুরী করেন। ফিরে এসে ১৯৮২ সালে সরকারী চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন এবং কনসালটেন্ট হিসেবে চাকুরী করেন।

১৯৭০ সালে আবুল হায়াতের সঙ্গে বিয়ে হয় তার মেজ বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনের। বিপাশা হায়াত ও নাতাশা হায়াত তার দুই কন্যা এবং তৌকির আহমেদ ও শাহেদ শরীফ খান তার দুই জামাতা।

ছবিসূত্র: সাদেক সামি