আবিদা সুলতানা

সঙ্গীত আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, এক হীরকখণ্ড কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা। গায়কীতে তিনি অনন্য, ভীষণ সজীব, ও প্রাণবন্ত। চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘নিমাই সন্নাসী’ ছবিতে। তখন তিনি একেবারেই তরুণী। গানের কথা ছিল “রাগ করোনা বিষ্ণুপ্রিয়া”। এরপর সত্তর-আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে আবিদা সুলতানা যে গানগুলোতে প্লেব্যাক করেন এর মধ্যে বেশ কিছু গান রীতিমত কালজয়ী।

‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবিতে সুরকার আমির আলীর সুরে “ভালোবাসার মূল্য যে কি/ সেতো আমি বুঝিনি” গানে কণ্ঠ দেন। জনপ্রিয় নায়িকা ববিতার লিপে গানটি সবার মন জয় করে ফেলে। রেডিওতে গানটি বাজতে থাকে রাতদিন। গানের সুর ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যন্ত বাংলাতে। এই বছরে তিনি আরও গাইলেন সিবি জামান পরিচালিত ‘ঝড়ের পাখি’ চলচ্চিত্রে খান আতার সুরে শাবানার লিপে “কখন গোপনে নিলে ঠাঁই নয়নে” গানটি তরুণীদের মনে অন্যরকম জায়গা করে নেয়। এ দুটি গান নিজস্ব স্বকীয়তায় অনন্য। দুটি গানই তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দ্বার উন্মুক্ত করে। এ বছর প্রখ্যাত পরিচালক, সুরকার-গীতিকার খান আতা নির্মাণ করেন বহুল আলোচিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্র। এই ছবিতে আবিদা সুলতানা প্লেব্যাক করেন “তুমি চেয়েছিলে ওগো জানতে” গানে।

আবিদা সুলতানার কণ্ঠে ভীষণ ভীষণ জনপ্রিয় ভূপেন হাজারিকার সুরে ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিতে “বিমূর্ত এই রাত্রি আমার”, , সত্য সাহার সুরে ‘উজানভাটি’ ছবিতে “দিনের কথা দিনে ভালো রাতের কথা রাতে”, ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবিতে “আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী”, ‘পুরস্কার’ ছবিতে “হারজিত চিরদিন থাকবেই”; সুবল দাসের সুরে ‘তালুকদার’ ছবিতে “এ কী বাঁধনে বলো জড়ালে আমায়”, ‘আলো তুমি আলেয়া’ ছবিতে “আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে”, গোলাম হোসেন লাডোর সুরে ‘বাজিমাত’ ছবিতে “যদি একটু আগে পেতাম তোমায়”, মনসুর আহমেদ-এর সুরে ‘তাজ ও তালোয়ার’ ছবিতে “নয়নে রেখে নয়ন”, শেখ সাদী খানের সুরে ‘এখনই সময়’ ছবিতে “একটা দোলনা যদি পেতাম”, আখতারুজ্জামান-রফিকুজ্জামান পরিচালিত ‘ফেরারী বসন্ত’ ছবিতে “হৃদয়ের অচেনা দুটি নদী”, আলাউদ্দিন আলীর সুরে ‘নিশানা’ ছবিতে “এমনি করেই একদিন প্রেম হয়ে যায়”, ‘মান অভিমান’ ছবিতে “আমি জোতিষীর কাছে যাব”, ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের সুরে ‘রাধাকৃষ্ণ’ ছবিতে “এ মধু জোছনায়”।

সহশিল্পীদের সাথে চলচ্চিত্রে গাওয়া তার কিছু গান ভীষণ জনপ্রিয়। জীবন সঙ্গী রফিকুল আলমের সাথে ‘উজানভাটি’ ছবিতে “এক নদীরই উজানভাটি আমরা দুটি ধারা”; এন্ড্রু কিশোরের সাথে গাওয়া “চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া”, ‘তৃষ্ণা’ ছবিতে “নানা পড়বো না রে”; সৈয়দ আব্দুল হাদীর সাথে ‘হিম্মওওয়ালি’ ছবিতে “এই ভালোবাসা বেঁচে থাকবে”, সুবীর নন্দীর সাথে ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’ ছবিতে গাওয়া “বিধি কমলও করিয়া পাঠালো আমায়” ও ‘সুদআসল’ ছবিতে “মাধবী কুঞ্জে/ পুঞ্জে পুঞ্জে”।

বশীর হোসেন

বশীর হোসেন একজন চলচ্চিত্র সম্পাদক এবং পরিচালক। তার চলচ্চিত্রাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে চিত্রসম্পাদক হিসেবে। এরপর তিনি ‘রাজধানীর বুকে’, ‘হারানো দিন’, ‘সূর্যস্নান’, ‘ধারাপাত’, ‘মেঘ ভাঙ্গা রোদ’, ‘অনেক দিনের চেনা’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘গোধুলীর প্রেম’, ‘রূপবান’, ‘জানাজানি’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘অপরাজেয়’, ‘সাত ভাই চম্পা’ ইত্যাদি। তার সম্পাদিত উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রগুলো হল চান্দাতালাশইয়ে ভি এক কাহানিবন্ধনমিলনক্যায়সে কহোসাত রং, ও বেগানা, ‘উলঝন‘, ‘তুম মেরে হো‘, ও ‘সোয়ে নদীয়া জাগে পানি‘। তিনি ‘মাটির মায়া’ ও ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবির জন্য দুইবার শ্রেষ্ঠ সম্পাদক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

বশীর হোসেনের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২২ নভেম্বর কুমিল্লার দেবীদ্বারে। তিনি ১৯৭৮ সালের ২৩ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন।

এম এ মোবিন

এম এ মোবিন হলেন একজন চিত্রগ্রাহক। তিনি ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক পুরস্কার জয় করেন।