তারেক মাসুদ

তারেক মাসুদ (Tareque Masud)বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে ক্ষণজন্ম এক নক্ষত্রের নাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে পৌছে দেয়ার জন্য যে কজন মানুষ ভূমিকা পালন করেছেন তারেক মাসুদ তার অন্যতম। চলচ্চিত্র নির্মানের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়কে এবং বাংলাদেশকে তুলে ধরার দায়িত্ব নিয়েছিলেন যেন তিনি। এই চলচ্চিত্র নির্মানকার্যে ব্যস্ত থাকা অবস্থায়ই আকস্মিকভাবে মহাপ্রয়ান ঘটে বাংলা চলচ্চিত্রের এই কৃতি সন্তানের।

তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র সংক্রান্ত কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকে। তিনি চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দেশে বিদেশে অনেকগুলো কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি শিল্পী এস এম সুলতানের উপর ডকিউমেন্টারী আদম সুরত নির্মান শুরু করেন। আদম সুরত মুক্তি পায় ১৯৮৯ সালে। এর আগে অবশ্য ১৯৮৭ সালে সোনার বেড়ী নামে বাংলাদেশের নির্যাতিত নারীদের উপর তিনি ২৫ মিনিট স্থায়ীত্বের একটি তথ্যচিত্র নির্মান করেন। ১৯৯২ সালে স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদের সাথে যৌথভাবে তারেক একটি অ্যানিমেশন শর্ট ফিল্ম নির্মান করেন যার দৈর্ঘ্য মাত্র তিন মিনিট।

তারেক মাসুদ মুক্তির গান চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে ব্যাপকমাত্রায় পরিচিতি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দুর্লভ কিছু ফুটেজ থেকে মুক্তির গান চলচ্চিত্রটি নির্মান করেন তারেক মাসুদ। ২০০২ সালে মাটির ময়না চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বের দরবারে পৌছে দিতে ভূমিকা পালন করেন তারেক। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস এর বিদেশী মুভির ক্যাটাগরীতে প্রতিযোগিতা করে এই চলচ্চিত্রটি।

চলচ্চিত্র নির্মান ছাড়া তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র বিষয়ে গভীর জ্ঞানপূর্ণ লেখালিখি করেছেন। তার লেখা বিভিন্ন আর্টিকেল নিয়ে একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে।

মাটির ময়না চলচ্চিত্রের প্রিক্যুয়েল হিসেবে তারেক মাসুদ ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্র নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই চলচ্চিত্রেরই লোকেশন দেখে ফেরার সময় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াজুড়িতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হন। এতে তিনি ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মুনীর মিশুকসহ সহ পাঁচ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত বাকি তিনজন হলেন, মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজ, তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল। একই গাড়িতে ক্যাথেরিন মাসুদ থাকলেও সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

তারেক মাসুদের বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ এবং মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ। ভাঙ্গা ঈদগা মাদ্রাসায় তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। পরবর্তীতে ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে তিনি মৌলানা পাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে এবং যুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ শিক্ষায় প্রবেশ করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটর ডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথেরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। এই দম্পত্তির একটি পুত্র সন্তান রয়েছে, নাম ‘বিংহাম পুত্রা মাসুদ নিশাদ’।

বাংলা চলচ্চিত্রে তারেক মাসুদের যে অবদান তা আজীবন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরিত হবে।

তারেক মাসুদের ওয়েবসাইট: http://tarequemasud.org

 

ব্যক্তিগত তথ্যাবলি

পুরো নামআবু তারেক মাসুদ
ডাকনামতারেক মাসুদ
জন্ম তারিখডিসেম্বর ৬, ১৯৫৬
মৃত্যু তারিখআগস্ট ১৩, ২০১১
জন্মস্থাননূরপুর, ভাঙ্গা, ফরিদপুর।
স্বামী/স্ত্রীক্যাথরিন মাসুদ

কর্মপরিধি