কাহিনী সংক্ষেপ
ইমনের বাবা-মা একাত্তরের ২৫শে মার্চের কালো রাত্রির পর ঢাকা ছেড়ে ইছাপুর গ্রামে আশ্রয় নেয়। সেখানে ইমনের পরিচয় হয় বাদল নামের এক কিশোরের সঙ্গে। ঢাকায় মিলিটারীরা বাদলের বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। সে প্রতিশোধ নেবার জন্য গ্রামে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ইমনও মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে একদিন যায় প্রশিক্ষণ নেবার জন্য। এদিকে ইছাপুর গ্রামে পাকবাহিনী আক্রমণ করে ইমনের বাবা-মাসহ গ্রামের অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছে। অসহায় ইমনকে আশ্রয় দেয় এক মুক্তিযোদ্ধা।
আজ ‘লাল সবুজের সুর‘ বাংলা সিনেমাটি দেখলাম । দারুন আইডিয়া । ডায়ালগ ও মোটামুটি ভাল ছিল। অর্থাৎ চিত্রনাট্যের প্রশংসা করা যায়। তবে কিছু কিছু যায়গায় সমস্যা ছিল । ফিল্মটির মাঝ অবস্থায় কিছুটা কাঁচা ডায়াডলগ। যা সবাইকে না হলেও কিছু কিছু , দর্শককে বোরিং করে তুলবে।
আমরা জানি এটা ১৯৭১ সালের ছবি । সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা এর আর্ট ডিরেকশন ও ১৯৭১ সালের হতে হবে। অর্থাৎ এটা বাধ্য । নইলে দর্শক বুঝতেই পরেবে না যে এটা ১৯৭১ সালের ছবি। শট ডিভিশন নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে চাই না । কারণ অনেকটা ডিরেকটরের ওপর নির্ভর করে। ডিরেকটর ইচ্ছামত শট ডিভিশন করতে পারেন । কোন সমস্যা নাই।
কালার নিয়ে আমার কোন মতামত নাই। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেহেতু সাদা কালো রঙের ক্যামেরায় অমর ভাষণ দিয়েছেন , সুতরাং আমিও পুরো ছবিটি সাদা কালো করে দিতাম ।
‘লাল সবুজের সুর‘ ছবিটি ২০১৬ তে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাই। ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ এর । অর্থাৎ , প্রায় ৪৫/৪৬ বছরের পুরোনো। আমর যাকে সহযেই ৫০ বছর বলতে পারি নির্দ্বিধায়।
এখন মূল কথা হল ৫০ বছর আগের কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে যখন কোন ছবি বানাবো তখন প্রথম যে জিনিসটা মনে রাখতে হবে তা হল- ১৯৭১ সালে কী কী ছিল এবং এখন কী কী সঙযুক্ত হয়েছে।
ফিল্মটিতে অতিরিক্ত যে বিষয়গুলো যোগ করা হয়েছে তা নিচে দেয়া হল-
১. বিল বোর্ড: ফিল্মটিতে বিভিন্ন ধরনের বিল বোর্ড দেখা যায় রাস্তার আশেপাশে। যেমন- ।ইউসিসি ব্যানার . ১৯৭১ সালে নিশ্চয়ই ইউসিসি কোচিং সেন্টার ছিলনা । বা অন্য কোন প্রষ্ঠিানের বিলবোর্ড।
২. ওয়াল টিউব লাইট: বাংলাদশে ওয়াল টিউব লাইট এসেছে অনেক পরে। কিন্তু তা ১৯৭১ সালে নয়। অথচ ফ্রেমে ওয়াল টিউব লাইট দেখা যাচ্ছে। কেন?
৩. কার/গাড়ী : বর্তমানের স্টাইলের কার গাড়ি নিশ্চয়ই তখন ছিলনা । কিন্তু ফ্রেমের ভিতর আমরা কার/গাড়ি দেখতে পাচ্ছী।
৪. ডিস এনেটনার ক্যাবল : বাংলাদেশে ক্যাবল নেটওয়ার্ক্ কখন আসে? আর ডিস এন্টেনা নিশ্চয়ই তখন ছিলনা । তাহলে ১৯৭১ সালে আমরা কিভাবে তা দেখতে পাব। ? ‘ লাল সবুজের সুর‘ ১৯৭১ . এ ছবিটি দেখলেই আমরা তা দেখতে পাব। কেন?
৫. স্কুল ড্রেস: ২ জন শিক্ষার্থীর গায়ে ২ টি স্কুল/ কলেজ ড্রেস। ১৯৭১ সালে এ্ ধরনের কালারের ড্রেস ছিলনা ।
৬. মোটর সাইকেল : মানলাম হোন্ডা ছিল । তাই বলে এ খনকার অত্যাধুনিক স্টাইলের হোন্ডা ছিলনা তখন ।
৭. ভারি দ্রব্য ওঠানামার ক্রেন : সময় ১৯৭১। বেশ থমথমে অবস্থা দেশে । কিন্তু ক্রেনে কাজ চালানোর কোন ছুটি নাই। দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে ত যাচ্ছে ।
৮. দরজার লকার : আমি মনে করি না যে তখন এমন অত্যাধুনিক দরজায় অত্যাধুনিক লকার লাগানো থাকত ।
৯. ছেলেদের ফুটবল খেলা: ১৯৭১. চারিদিকে নীরব অনস্থা । যে যে দিকে পারছে প্রাণ বাঁচাতে ছুটে যাচ্ছে । অথচ ছেলেরা মনের আনন্দে ফুটবল খেলছে । এটা হইলো?
১০. লোহার পাইপ: ১৯৭১ সালে এত্ত গুলান লোহার পাইপ কই পাইল?
১১. গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি: ১৯৭১ সালেই যদি বাংলাদেশের গ্রামে বিদ্যুৎ থাকত ত আজ বাংলাদেশ কই থাকত একটু চিন্তা করেছেন ।
১২. ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি: দেখলাম ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নাই। বাইরে হারিকেন জ্বলছে। সমস্যা নাই। সমস্যা এখানেই যে , বাইরে হারিকেনে তেমন ভাল আলো দিতে পারেনা । ঘরের ভিতরে হারিকেন নাই অথচ এত লাইটিং আসছে কোথা থেকে? আকাশ থেকে ?
১৩. আকাশমণি গাছ : বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্ট ডিরেক্টর , জনাব উত্তম গুহ স্যার অনেক আমাদের বলেছিলেন । আকাশমণি গাছের কথা । আচ্ছা ১৯৭১ সালে আকাশমনি গাছ কোথা থেকে এল? তখন ত আকাশমনি গাছ ছিলনা ।
১৪. অবিশ্বাস্য চাঁদের আকৃতি : ওয়াইড শটে (এ্যাঙ্গেলে) দেখলাম চাঁদটা ভাল দেখাচ্ছে। কিন্তু মিডে এমন হল কেন? চাঁদটার ভিতর সাদা রঙের আর চারিদিকে বৃত্তাকার নীল রঙ. কেন?
১৫. মাটির দেয়ালের ঘরের বারান্দায় বৈদ্যুতিক বাতি: দেখেই বোঝা যাচ্ছে । যে এটা গ্রামের একটি দরিদ্রের ঘর। সমস্যা হল বারান্দায় বৈদ্যুতিক বাতি কেন , বৈদ্যুতিক তার কেন? বাড়িতে ত বিদ্যুৎ নাই দেখাই যাচ্ছে ।
১৬. খান সেনাদের গাড়ী: খান সেনাদের প্রথম গাড়িটা এমন কেন? আধুনিক স্টাইলের গাড়িগুলির মত ।
১৭. অপূর্ণাঙ্গ সেকুয়েন্স: মুকি্তযোদ্ধারা ২ টি বোমা মারল খান সেনাদের ওপর । কিন্তু তাদের কাছে রাইফেল ছিল । ২ টি বোমার আঘাতে তারা মারা যায়নি । বেশ কয়েক জন হাঁটছিল । আর পিছনে সরছিল । আর মুক্তি বাহিনী তাদের তাড়া করছিল । হঠাৎ , অন্য শট শুরু হয়ে নতুন সেকুয়েন্স আসল ।
সমস্যা হল- খান সেনারা সবাই মরল না কেন?
তাদের হাতে রাইফেল ছিল । তারা গুলি ছুড়ছিল । হঠাৎ , শটের সময় শেষ ।
অপূর্ণাঙ্গ সেকুয়েন্স কেন ? সেখানে দর্শকদের আর ও কিছু দেখার আগ্রহ ছিল ।
১৮. স্টীল জগ: যায় হোক দরিদ্রের ঘরে, শোবার যায়গা নাই, একেবারে নতুন জগটা দারুন মানিয়েছে।
বলার অনেক ছিল লিখতে ভাল লাগেনা । ঘুম আসছে অনেক ।