ভয়ংকর সুন্দর সিনেমার রিভিউ এবং নিজের অভিজ্ঞতা

২০১০-১১ সালে দেড় বছরের মত আমাকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় থাকতে হয়েছিল। সেখানে গিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং এর জন্যে। রাজাবাজার এলাকায় থাকতাম তখন। ঢাকার ওরকম জীবন ব্যবস্থার সাথে আগে থেকে পরিচিত ছিলাম নাতো তাই রাতের বেলা বালতি ভরে পানি সংগ্রহ করে রাখা, পানি ফুটিয়ে পান করা এইসবের সাথে মানিয়ে নিতে আমার বেশ কষ্ট হয়েছিল। দুদিন পরে পরে পানি চলে যেত তাই হোটেল থেকে টাকায় এক গ্লাস করে পানি খেয়ে আসতাম। ভ্যাঁপসা গরমে ভীষণ তৃষ্ণা পেলে গরম পানি অত খাওয়া যায় নাকি! তার উপর বিস্বাদ পানির সাথে ছোটছোট কণা এইসব মিলিয়ে পানির ধারেকাছে খুব কম যাওয়া হতো। ফলে যা হবার তাই হলো, টাইফয়েড পেয়ে বসলো।

Continue reading

নকলের ধকল-২০১৬

২০১৫ সাল পর্যন্ত নকল বাংলাদেশী সিনেমার সমারোহ দেখে সাধারণ দর্শকদের মনে একটাই কামনা ছিল ২০১৬ তে এসে যেন আর “দুই টিকিটে এক সিনেমা” দেখতে না হয়। নকল গল্পে সিনেমা নির্মাণের হার কিছুটা কমলেও তা কিন্তু বছরের মোট মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার এক-তৃতীয়াংশ। আসুন এক নজরে দেখে নেই ২০১৬ সালে আমরা কি কি নকল/রিমেক/অনুপ্রাণিত গল্পের সিনেমা দেখেছি এবং সেগুলোর পরিণতি… Continue reading

আমাদের গল্পে আমাদের সিনেমা

একটা সিনেমা একটা সমাজের দর্পণ। কোন একটা দেশকে জানার সহজ উপায় হল সেই দেশের সিনেমা দেখা। কারন একটা সিনেমার মাঝেই দেখা যায় সেই দেশের লোকেশন, সংস্কৃতি, ধর্ম, জীবনধারা। আমি ইরানের বিখ্যাত পরিচালক মাজিদ মাজিদির একটা সিনেমা দেখেছিলাম বারান। সেই সিনেমায় দেখা যায় একটি মেয়ে ছেলে সেজে কাজ করে। কারন তার বাবা কর্মক্ষম ছিলনা। তাই বাধ্য মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন কাজে। সেই মেয়ে বিল্ডিং  নির্মাণ কাজে যা একটা মেয়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যাই হোক এই সিনেমার মাধ্যমে আমরা সেই দেশের সমাজ বাস্তবতাকে জানতে পেরেছি। একই ভাবে যদি আমরা যদি তামিল, তেলেগু, মালায়লাম কিংবা হিন্দি ভাষার ছবির দিকে তাকাই তাহলে খুব ভাল ভাবেই লক্ষ্য করতে পারবো যে একই দেশ হওয়া স্বত্তেও এক একটা ভাষার সিনেমা এক একটা জন গোষ্ঠীকে আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। আবার যদি আমরা চীন,  কোরিয়ান কিংবা ইংরেজি ভাষার হলিউডের সিনেমা দেখি তাহলেও কিন্তু আমরা বিভিন্ন দেশ  ও তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হব। Continue reading

কাটপিস কালচারঃ একটি দুঃস্বপ্নের পর্যবেক্ষণ

Ranga Bou Poster with Rituporna Amin Khan Humayun Faridi first vulgur hot bangla cinema‘কাটপিস’ নিয়ে একটা লেখার অনুরোধ ছিল তাই লিখছি। এ কালচারটি নিয়ে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আমার কাছে একটা বই আছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সেন্সর ব্যবস্থা নিয়ে। বিবেকানন্দ রায়ের লেখা একটা থিসিস। এ বইতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাশাপাশি অশ্লীলতা বিষয়ে একটি বিস্তারিত ধারণা আছে। সেখান থেকে কিছু এবং নিজের স্টাডি থেকে কিছু অবজারভেশন নিয়ে লেখাটি লিখছি। আশা করি ধারণা ক্লিয়ার হবে।

‘কাটপিস’ শব্দটি সিনেমা সম্পর্কিত বিষয় হিশেবে পরিচিতি পাবার পেছনে অবাক করা সত্য হিশেবে সেন্সরবোর্ডের-ই একটি বিশেষ আবিষ্কার। এর পেছনে তাদের সম্মিলিত ‘সিন্ডিকেট’ বাণিজ্য তো দিনের অালোর মতোই সাধারণ ঘটনা। সেন্সরের কর্মকর্তা বা মুনাফাখোর সেসব সেন্সর সদস্যরাই নব্বই দশকের শেষের দিকে মূলত সালমান শাহর মৃত্যুর পরে এবং রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান-দের আগমনের সময়টি থেকে সংগঠিত একটি সিন্ডিকেট উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ কালচার শুরু করে। Continue reading

শহীদুল ইসলাম খোকনঃ কালের দায়

Shahidul Islam Khokon

মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই
– প্রাণ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

একজন মৃত্যুশয্যায় থাকা শহীদুল ইসলাম খোকনের করুণ দৃষ্টি থেকে থেকে এ কথাগুলোই বলেছিল।যখন নায়ক সায়মন সাদিকের ফেসবুক আইডিতে হাসপাতালে খোকনসাহেবের রুগ্ন, ঝুলে পড়া চামড়া আর প্যারালাইস্ট হাত দেখেছিলাম মনে হয়েছিল তার চোখ দুটো বলছে তিনি বাঁচতে চান।মৃত্যু কারো কথা শোনে না, শোনে নি তাঁর কথাও।তাঁর চলে যাওয়ার আগের কঠিন সময়গুলোতে তিনি কাছের অনেককেই পাননি যারা তাঁর সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার গড়েছে।আরো কিছু কারণ আছে তবে একটা বড় কারণ আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।এখনই না শেষে বলছি, তার আগে দরকারি কিছু কথা সেরে নেব.. Continue reading

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ও ডিজিটাল চলচ্চিত্রের সমস্যা, সম্ভাবনা

National Film Day 2016আজ ৩ এপ্রিল ‘জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস।’শ্লোগান নির্ধারিত হয়েছে ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র : সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।’

ডিজিটাল সিনেমার হাত ধরে দেশের সিনেমাশিল্প এগিয়ে যাবে এ স্বপ্ন আমরা দেখি।এ পর্যন্ত যেসব ডিজিটাল সিনেমা রিলিজ হয়েছি সেগুলো দর্শক পছন্দে কোনোটাে গ্রহণযোগ্য হয়েছে কোনোটা হয়নি।দর্শক কী চায় সেটি বোঝা যায়। দর্শক পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তনটি কখনোই অতীতকে অস্বীকার করে নয়। অতীতকে স্মরণ করে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দিনের সিনেমার দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এ পর্যন্ত দেশের ডিজিটাল সিনেমাজগতে অর্জন ও ব্যর্থতা কেমন তার একটা হিশেব কষলে যা মেলে তা হচ্ছে, সিনেমা রিলিজ হচ্ছে একের পর এক তবে এর পাশাপাশি সিনেমাহল বন্ধ হওয়া, হিন্দি-তামিল থেকে গল্প নকল করে সিনেমা বানানো, কারিগরি সমস্যা, সিনেমার মধ্যে নাটকীয় সাউন্ড বা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদি সমস্যা থেকে গেছে। Continue reading

দিতি : কৈশরের ক্যানভাসে এক সাদাকালো সেলুলয়েড কন্যা

নব্বই দশকের শুরু কিংবা মাঝামাঝি। আর আমাদের অনেকেরই শৈশবের শেষ মূহুর্ত। বিশ্বকাপ ফুটবলের উত্তেজনায় গ্রামে ঢুকতে শুরু করলো চারকোণা বক্সের ইলেক্ট্রিক যন্ত্র- টেলিভিশন। আমাদের পাড়াতেও ঢুকলো একটা। সেই সাথে অন্য এক জগতের সন্ধান, তবে সবকিছু সাদাকালো। একি আজব কান্ডরে। পুরো দুনিয়া ছোট্ট একটা বাক্সের ভিতরে। তখনই আমাদের পরিপূর্ণ বিশ্বাস হল আমেরিকা বলতে কিছু একটা আছে কিংবা লন্ডন বা কালোদের দেশ আফ্রিকা। এতদিন তো রুপকথার কিসসার মতন এগুলো অন্যমুখে শুনতাম। আমাদের বিস্ময় আটকে গেল ঐ আয়তাকার বস্তুতে। হাফপ্যান্টের পকেটে মার্বেলের আওয়াজ থমকে গেল কিংবা জ্যোস্না রাতের ‘আয়রে আয় টিয়া’ হারালো রাতের উঠোনেই! ধুলোপথে অহেতুক দৌড়াদৌড়ির রহস্যও ঠুটে গেল পা থেকে। Continue reading

হারিয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল ….

২

ঢাকার বাইরের চার বড় শহর চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও যশোরে আশঙ্কাজনকভাবে গত কয়েক বছরে কমেছে সিনেমাহলের সংখ্যা, কমেছে দর্শক। ভাল ছবি কম তৈরি হওয়া আর ঘরে বসেই সিনেমা দেখার অবারিত সুযোগের কারণে দর্শকরা হলে কম আসছেন বলে মনে করেন হল মালিকরা ।

একসময় চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৫টি সিনেমা হল থাকলেও এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি। দর্শকের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে যশোরের ১৫টি সিনেমা হল। এখন টিকে থাকা ৬টিরও বন্ধপ্রায় দশা। Continue reading

গাজী মাজহারুল আনোয়ারঃ একজন ‘বাংলাদেশী’ ও একটি ‘প্রতিষ্ঠান’এর নাম

gazi majharul anwarগাজী মাজহারুল আনোয়ার’ এই নামটি শুনেনি বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তী’র নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি ২১ হাজার গানের স্রস্টা ও আমাদের বাংলা গানের সর্বকালের সেরা গীতিকারদের একজন । একজন স্বনামধন্য কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও । Continue reading

চোখে লেগে থাকা সিকোয়েন্স – ২ঃ মান্নাপর্ব

mannaআজ ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সিনেমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক/অভিনেতা মান্নার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। মান্নাভাইকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।তাঁর অসংখ্য সিনেমার মধ্যে নির্বাচিত আমার প্রিয় কিছু সিনেমার সিকোয়েন্স সবার জন্য শেয়ার করছি।বাণিজ্যিক ও এক্সপেরিমেন্টাল দুই ধরনের সিনেমাতেই মান্নাভাই অপ্রতিদ্বন্দ্বী তাই দুই ক্যাটাগরিকেই নির্বাচন করলাম।

যন্ত্রণা
শেষ সিকোয়েন্স।দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মান্না ও তার বন্ধুরা ফাঁসির জন্য প্রস্তুত।সবাই সবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।প্রায় মিনিট খানেক কোনো সংলাপ নেই কারো।মান্না তখন চোখে চাপা অশ্রু নিয়ে চেয়ে থাকে বন্ধুদের দিকে।বাণিজ্যিক সিনেমাতে এরকম সাইলেন্ট অ্যাকটিং দেখা যায় না। স্রেফ অসাধারণ! Continue reading