প্রথমেই অবাক করা কথা দিয়ে শুরুটা করি। জানলে অবাক না হয়ে পারবেন না যে এমন একটা ক্লাসিক সিনেমা জীবনে এখন পর্যন্ত মাত্র নয়বার দেখেছি। এর অাগে অাটবার আর গত পরশু দেখার পর নয়বারে ঠেকেছে। কারণটা জিজ্ঞেস করতে হবে না, বলছি। ‘অানন্দ অশ্রু’ দেখার সময় প্রথমে ‘অানন্দ’ অার পরে ‘অশ্রু’-র যে আগমন তার মধ্যে অশ্রুটাই আমাকে বেশি জ্বালাতন করে দেখার সময় তাই এত কমবার দেখা। তাই বলে অাবার ভাববেন না যে সিনেমাটি পুরো দেখিনি। একদম পাই পাই করে দেখা, মুখস্থ। Continue reading
লিখেছেনঃ রহমান মতি
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র গত শতকে যেভাবে সমৃদ্ধ ছিল সেই সমৃদ্ধির দিকে আবারও যেতে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি। সেকালের সিনেমা থেকে গ্রহণ বর্জন করে আগামী দিনের চলচ্চিত্রের প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠুক। আমি প্রথমত একজন চলচ্চিত্র দর্শক তারপর সমালোচক হিশেবে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন দেখি। দেশের সিনেমার সোনালি দিনের উৎকর্ষ জানাতে গবেষণামূলক কাজ করে আগামী প্রজন্মকে দেশের সিনেমাপ্রেমী করার সাধনা করে যেতে চাই।
যন্ত্রণা : যে জ্বালা অাজও শেষ হয়নি
সিনেমার নামে একটা অার্তনাদ অাছে। সত্তর দশকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যে সংগ্রাম সাধারণ মানুষ দেশগড়ার জন্য করেছে অন্যদিকে দেশের সম্পদ লুট করে সুবিধাবাদী বিভিন্ন অাধিপত্যবাদী রাজনৈতিক দল যে চক্র গঠন করেছিল তার একটা স্টেটমেন্ট অাছে সিনেমায়। সেসব সুবিধাবাদীরা মিডিয়ায় নিজেদের দেশের কাজ করা নেতা বলে প্রচার করত। সৎ সাংবাদিকদের এড়িয়ে যেত। বেকারত্ব ভয়ংকর অাকার ধারণ করেছিল। তারই প্রভাবে তরুণ যুবসমাজ এক একটা দল গঠন করে সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আশির দশকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিষিয়ে তুলেছিল সুবিধাবাদী পুঁজিবাদী গোষ্ঠী। এই রাজনৈতিক বাস্তবতায় কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেন ‘যন্ত্রণা’ সিনেমা। Continue reading
ঢালিউড বিবর্তন : রুচির সেকাল-একাল
আপনি রাজ্জাক আমলের সিনেমা দ্যাখেন আপনি সেকালের দর্শক, সমালোচক হয়ে যান। আপনার চিন্তায় একজন রাজ্জাক, বুলবুল অাহমেদ, কবরী, শাবানা, উজ্জ্বল, সোহেল রানা, ববিতা, জসিম, ফারুক, জাফর ইকবাল তারা আলাদা আবেদন নিয়ে আসে। আপনি রংবাজ, অনুভব, সুতরাং, পিচ ঢালা পথ, স্বরলিপি, মাসুদ রানা, নয়নের আলো, লাইলী মজনু সিনেমাগুলো নিয়ে সেকালের গ্রাম, মফস্বল বা ঢাকাকেন্দ্রিক জীবনকে ভাবেন এবং সেটাই খুব বেশি স্বাভাবিক। আপনি ডিরেক্টরের প্রেজেন্টেশন, আর্টিস্টের অভিনয় খেয়াল করেন, খেয়াল করেন সিনেমার গল্প ও নির্মাণ। ষোলআনাই পান আপনি। আশি,নব্বই ও তারপরে এসেও আপনি মান্না, রুবেল, কাঞ্চন, বাপ্পারাজ, নাঈম, দিতি, চম্পা, সালমান শাহ, ওমর সানী, মৌসুমী, শাবনূর, পপি, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল, শাকিব, পূর্ণিমাদের সিনেমাতেও ভ্যারিয়েশন পান গল্পে, নির্মাণে। Continue reading
একজন ও অনেক মান্নার গল্প
মান্না একটা নাম ঢালিউডে। নামটা একটা প্রতিষ্ঠান।যে প্রতিষ্ঠানে বহুমুখী চরিত্রে অভিনয়ের একটি টোটাল প্যাকেজ মিলেছিল। নায়ক ও অভিনেতা সত্তাকে অালাদা করার জন্য সুনির্দিষ্ট গুণ মান্না রেখে গেছে। তাকে বিশ্লেষণে তাই একজন পরিপূর্ণ চলচ্চিত্র শিল্পীর বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় অনায়াসে।
এফডিসিভিত্তিক ‘নতুন মুখের সন্ধানে’-র মাধ্যমে টাঙ্গাইলের ছেলে মান্না বাংলাদেশী সিনেমায় অাসে। তাঁর ক্যারিয়ার পার্শ্ব থেকে প্রধান নায়ক পর্যন্ত ছিল। প্রথম দিকের সিনেমাতে মান্না যে ফ্লোর পেয়েছিল তার ভেতর একটা সৌভাগ্যের পরিবেশ ছিল। সে পরিবেশটি বাংলাদেশের সিনেমার সোনালি দিনের কিংবদন্তি তারকাদের সাথে কাজ করার সাথে সংযুক্ত। মান্না কাজ করেছে খান আতাউর রহমান অভিনীত ‘ছোট বৌ’ সিনেমায়। একজন খান অাতাউর রহমান যখন মান্নার মতো নিউকামারের সিনেমায় থাকে নিশ্চয়ই সেটি তার জন্য শেখার একটা বিরাট সুযোগ করে দিয়েছিল। এভাবে রাজ্জাক, অালমগীর, জসিম এই প্রথম সারির তারকাদের সাথে তাঁর কাজ করার সুযোগ ঘটেছিল। পেয়েছিল তাঁর সময়ের বাঘা বাঘা সব অার্টিস্ট হুমায়ুন ফরীদি, রাজিব, এটিএম শমসুজ্জামান, খলিল তাঁদের সাথে কাজ করার সুযোগ। নিজস্বতা প্রমাণ করেই পরে নিজের ইমেজ গড়েছিল। সেসব অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তীকালের অন্যতম সেরা নায়ক/অভিনেতা হিশাবে অলরাউন্ড পারফর্মার করে তোলে। Continue reading
শাহনাজ : আপন অালোয় কিছুক্ষণ
শাহনাজ আমাদের মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম অভিনেত্রী। এহতেশাম দাদু যে ক’জন নায়িকাদের এনেছেন তারা কেবল নায়িকা হয়ে থাকেনি অভিনেত্রীর জায়গায় তাদের ডেডিকেশন প্রমাণ করেছে। শাহনাজ সেটা পেরেছে। তার সিনেমার পর্যায়কে ভাবলে একটা ঘাবড়ে যাবার বিষয় সামনে চলে অাসে। যখন তাকে নিয়ে লেখার চিন্তাটা করলাম একজন বলে বসল ‘শাহনাজ কিন্তু অশ্লীলতার জন্য বেশ সমালোচিত।’ তার মানে তাকে এত গুরুত্ব দেবার তেমন কিছু নেই তিনি বোঝালেন।এটাই সমস্যা। একটা সাব- অর্ডিনেট বিষয়কে পুঁজি করে একজন প্রতিভা দেখানো অভিনেত্রীর স্বর্ণসময়কে অস্বীকার করাও কোনো ভালোমানুষির পর্যায়ে পড়ে না। সে যাই হোক অাজকের শাহনাজ কথনে একটা নাতিদীর্ঘ ভূমিকা নিজের স্মৃতি থেকে বলা দরকার আর তার ভেতর থেকেই বেরিয়ে অাসবে তার সিনেমার অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণ। Continue reading
উৎসর্গ হুমায়ূন ফরীদি
মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়
অতীতের থেকে উঠে এসে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে
-মানুষের মৃত্যু হলে,জীবনানন্দ দাশ
কবি যা বলছেন তাতে একথা পরিষ্কার মৃত্যু সব মানুষের জীবনে এলেও কারো কারো জীবন এতটাই মহিমান্বিত হয়ে ওঠে যে মৃত্যু তাকে শুধু কেড়ে নিতে পারে যেখানে চোখের দেখাটা আর থাকে না কিন্তু মনের দেখাটা থাকে চিরদিন। একজন হুমায়ুন ফরীদি, কোথ্থেকে শুরু করব তাঁকে নিয়ে? ফরীদিকে নিয়ে বলতে গেলে কীভাবেই বা শুরু করতে হয় বোঝা মুশকিল। তারপরও শুরু করলাম নিজের মত করেই। খালি চোখে সামনাসামনি আমরা আর দেখতে পাই না প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে। তিনি অসাধারণ,অপূর্ব। বিশ্বমানের অভিনেতা। তাঁকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। আমরা কী হারিয়েছি তা টের পাই তাঁর মৃত্যুর পরেই। অবশ্য আমাদের দেশে এমনটা নতুনও নয়। আমরা আগে হারাই তারপর আফসোস করি এটাই আমাদের চিরদিনের অভ্যাস। Continue reading
বালিকা হলো বধূ : অাদর্শ বাণিজ্যিক সিনেমা
নব্বই দশকের জমজমাট বাণিজ্যিক সিনেমার সফল যাত্রায় উল্লেখযোগ্য এবং অালোচনা সৃষ্টিকারী সিনেমা ‘বালিকা হলো বধূ‘। তোজাম্মেল হক বকুল দেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ের জোছনা’-র পরিচালক। তিনি বাণিজ্যিক সিনেমার ব্যবসাসফলতা এবং সিনেমা নির্মাণের মসলা অসাধারণভাবেই প্রয়োগ করতেন। তাঁর সমসাময়িক নির্মাতারা তাঁকে বাণিজ্যিক সিনেমার মাস্টারমেকার বলেই জানতেন। Continue reading
বাবা কেন চাকর : বাবাদের বাস্তব
রাজ্জাক একাধারে লিজেন্ডারি অভিনেতা ও নির্মাতা। তাঁর ‘মৌচোর, চাঁপা ডাঙার বউ,জ্বীনের বাদশা, সৎভাই, বাবা কেন চাকর, সন্তান যখন শত্রু’ সিনেমাগুলো এক একটা মাইলফলক। সিনেমাগুলোর মধ্যে সাবজেক্টের ভেরিয়েশন আছে।
‘বাবা কেন চাকর’ পারিবারিক মূল্যবোধের, দায়বদ্ধতার অসাধারণ সৃষ্টি। এ সিনেমা যারা দেখেছে তারা যত শক্ত মনের মানুষই হোক না কেন কোথাও না কোথাও তাদের মন কেঁদেছে। রাজ্জাক পুরো সিনেমাকে অদ্ভুত দক্ষতায় ঢেলে সাজিয়েছেন। একটা সিনেমার গল্প শুরুতেই বেদনার হয় না।সুখী পরিবার ধীরে ধীরে অসুখী বা স্বার্থপরতার দিকে ঝুঁকতে থাকে। তখনই শুরু হয় ভাঙন। এই ভাঙনে একজন বাবা পরিবারের অভিভাবক হিশেবে যে করুণ বাস্তবতার স্বাক্ষী হন তারই গল্প ‘বাবা কেন চাকর।’ Continue reading
নিরন্তর : যে বাস্তব শেষ হয় না
জীবনে পতিতা-র সাথে কখনো কথা বলেছেন?
তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। ঢাকা থেকে ক্লাস করি। ক্যাম্পাসের বাসে ছিল আসা-যাওয়া। একদিন আমার ফ্রেন্ডসহ জরুরি কাজ শেষ করে ঢাবি টিএসসি থেকে ফিরছি। ফেরার পথে যে দেরি হয়ে গেছে অনেক তা জানতাম না। আমার হাতঘড়িটা সমস্যা করছিল। ফ্রেন্ডকে বললাম ‘কটা বাজেরে।’ ও বলল ‘রাত প্রায় এগারোটা।’ ভয় পেয়ে গেলাম খানিকটা। ও ছিল খুব সাহসী। ঘরে-বাইরে তেমন কাউকে পরোয়া করত না। স্বাধীন ছিল খুব। তো আমরা গাড়িঘোড়াও পাচ্ছিলাম না। ওর মিরপুর যাওয়া দরকার আমার শ্যামলী। হেঁটেই রওনা দিলাম। আসাদ গেটের যে রাস্তাটা সংসদ ভবন হয়ে খামারবাড়ি গেল সেখানে মোড়ে আসতেই কয়েকটা মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। Continue reading
দীপু নাম্বার টু : কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার
ছেলেবেলায় দেখা আপনার সেরা দেশীয় সিনেমা কোনটি?
প্রশ্নের উত্তরে যে সিনেমাগুলোর নাম মিলবে তার মধ্যে ‘দীপু নাম্বার টু’ প্রথম কাতারে থাকবে এটুকু নিশ্চিত। ছেলেবেলার সাইকোলজি যেদিকে যায় বা পরিবার, নিজের অালাদা ভুবন, আবিষ্কারের নেশা এসব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিশেবেই থাকে।লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সূক্ষ্মভাবে সে প্লটকে তাঁর উপন্যাসে কাজে লাগিয়েছেন। আর উপন্যাস থেকে সিনেমা বানিয়ে বিরল মুন্সিয়ানার হাত দেখানো নির্মাতা হলেন মোরশেদুল ইসলাম। সিনেমাটি আমাদের ছেলেবেলার ইমোশনকে টাচ করতে পেরেছিল বলেই আজো দেখতে ভালো লাগে এবং আমরা নস্টালজিক হই। পাশাপাশি এ প্রজন্ম বা আগামী প্রজন্ম তাদের ছেলেবেলাকে ছুঁয়ে দিতে চাইলেও এ সিনেমার কাছে অনেককিছুই পাবে। অতঃপর, সময় এবং দর্শক ইমোশন ধারণ করার বিরল যোগ্যতা নিয়েই সিনেমাটি ক্লাসিক। বর্তমান লেখাটি পড়তে পড়তে অাপনার কাছে ‘ক্লাসিক’ দিকটি পরিষ্কার হবে। Continue reading