কাহিনী সংক্ষেপ
হৃদয়পুরে জন্ম নেয়া ছেলে আবীর যে ভালোবাসে মিউজিক করতে এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সেই আবীরকে হৃদয়পূর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় নীলাকে ভালোবাসার অপরাধে। নিয়তি আবার তাকে সেই শহরে ফিরিয়ে আনে। সে খুঁজতে থাকে তার ভালোবাসাকে। (Chhuye Dile Mon)
হৃদয়পুরে জন্ম নেয়া ছেলে আবীর যে ভালোবাসে মিউজিক করতে এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সেই আবীরকে হৃদয়পূর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় নীলাকে ভালোবাসার অপরাধে। নিয়তি আবার তাকে সেই শহরে ফিরিয়ে আনে। সে খুঁজতে থাকে তার ভালোবাসাকে। (Chhuye Dile Mon)
আরিফিন শুভ | আবীর | |
জাকিয়া বারী মম | নীলা | |
মিশা সওদাগর | ||
আলীরাজ | ||
ইরেশ যাকের |
পুরষ্কার | বছর | ফলাফল | বিভাগ/গ্রহীতা |
---|---|---|---|
বাচসাস পুরস্কার | ২০১৫ | জয়ী | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা |
সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার | ২০১৫ | জয়ী | শ্রেষ্ঠ অভিনেতা |
কাহিনী | শিহাব শাহীন |
চিত্রনাট্য | শিহাব শাহীন |
সংলাপ | শিহাব শাহীন |
সঙ্গীত পরিচালক | সাজিদ সরকার, হাবিব ওয়াহিদ |
সুরকার | - |
গীতিকার | শাহান কবন্ধ, মারজুক রাসেল, সোমেশ্বর অলি, সাজু খাদেম |
মুক্তির তারিখ | ১০ এপ্রিল, ২০১৫ |
ফরম্যাট | ডিজিটাল |
রং | রঙিন |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
‘ছুঁয়ে দিলে মন’ এর গান নিয়ে কিছু কথা…………
ছুঁয়ে দিল মন ছবির গানগুলো নিয়ে কিছু কথা বলি। আমার মতে এই ছবির সেরা গান ‘ভালবাসা দাও, ভালবাসা নাও।’ অনেকের কাছেই হয়ত এটা অস্বাভাবিক ঠেকছে। বিশেষ করে যারা ছবিটা এখনো দেখেন নাই। ছবিটা দেখার আগে আমারও প্রিয় গান ছিল শাকিলা আর তাহসানের কন্ঠে ছবির টাইটেল ট্র্যাকটা। কিন্তু ছবিটা দেখার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে পারলাম না।
কারণ প্রথমত ভালবাসা দাও… গানটা অনেক বেশি সিচুয়েশনাল। এবং এই গানটা ছবিতে বেশ কয়েকবার এসেছে এবং প্রতিবারই কাহিনীকে অনেক খানিটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাছাড়া এই গানের তিনটা আলাদা ভার্সন আছে ছবিতে। এবং তিনটি ভার্সনই দারুণ শ্রুতিমধুর। যদিও হাবিবের কন্ঠে গানের ফুল ভার্সনটাই সবচেয়ে ভাল লেগেছে। তবে এই ফুল ভার্সনের চিত্রায়ন নিয়ে কিঞ্চিত আপত্তি না তুলে পারছি না। জানি সিনেমায় এরকম হয়েই থাকে তবু কনসার্টের স্টেজে শুরু হওয়া গান গিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় শেষ হওয়া যথেষ্ট আজগুবি লেগেছে। বিশেষ করে যে ছবিতে অন্য অনেকক্ষেত্রেই পরিচালক রিয়েলিস্টিক ফ্লেভার ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন, সে ছবিতে এসব ছেলেমানুষি ঠিক মানায় না।
যাইহোক, এবার বলা যাক টাইটেল ট্র্যাকটার ব্যাপারে। অসাধারণ লিরিক, অসাধারণ কম্পোজিশন, অসাধারণ গায়কি – এই গানের সবকিছুই অসাধারণ। তবু ছবিতে পরিচালকের সামান্য একটা ভুল গানটাকে সাধারণের কাতারে এনে ফেলেছে। ভুলটি হল, গানটিকে ভুল জায়গায় ব্যবহার। আগের দৃশ্যে মম আর ইরেশ কথা বলছিল। পরের দৃশ্যেই মম কি করে শুভর জন্য ডানা ছাড়া পাখি হয়ে উঠল, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে তা ঠিক বোধগম্য হয়নি। তবে আশেপাশের দর্শক রিয়েকশন দেখে বুঝেছি, তারা হঠাৎ করে এই গানের আগমনের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ফলশ্রুতিতে, চমৎকার একটা গানও দর্শক খুব একটা সাদরে গ্রহণ করে নাই, এবং উপভোগও করে নাই।
শূণ্য থেকে গানটা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলার নাই। গানের মিউজিক চমৎকার। যতক্ষণ গানটা বেজেছে, দর্শক পুরোপুরি এনজয় করেছে। গানের মনোমুগ্ধকর বাদ্যের তালে তালে হাতে তালি দিয়েছে। কিন্তু এইসবের ফাঁকে আসল গানটাই ঠিক উপভোগ করা হয়ে ওঠে নি। গানের কথা কিছুই বুঝি নাই। তবে গানের চিত্রায়ন ভাল লেগেছে। মম আর শুভর কেমিস্ট্রি এই গানে ভাল ছিল। দুজনের নাচই মন কেড়েছে। ঠিক সিচুয়েশনাল সং না হলেও, কাহিনীতে অল্প হলেও প্রভাব ফেলেছে গানটা।
ছবিতে প্রধান এই তিনটি গানই ছিল। এছাড়াও পরিচালক বেশ মুনশিয়ানার সাথেই নিয়মিত বিরতিতে ক্লাসিকাল কিছু বাংলা গান ব্যবহার করেছেন। এবং দ্বিতীয়ার্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে যেসব দেশাত্মবোধক গানের অবতারণা ঘটেছে, সেগুলোও ছবির সঙ্গীত বিভাগে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সবমিলিয়ে বেশ কিছু খারাপ লাগা থাকলেও, ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ এর মিউজিকাল জার্নিটা ছিল দারুণ উপভোগ্য।
দেখে এলাম ছুঁয়ে দিলে মন। এই ছবির সবচেয়ে উপভোগ্য এবং জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন একমাত্র সংলাপ হল মিশা সওদাগরের মুখে, ‘প্রত্যেক জিনিসেরই কিছু ভালো দিক আছে, কিছু খারাপ দিকও আছে।’ ছুঁয়ে দিলে মনেও এই দুই দিকই সমানভাবে আছে। প্রথমে বলা যাক ভালো দিকগুলোর কথা।
লোকেশন বাছাইয়ে পরিচালক মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। পাহাড়ি অঞ্চলের পটভূমিতে নজরকাড়া লোকেশন। চোখের পক্ষে ছিল দারুণ আরামদায়ক। যদিও একটা সময় পর লোকেশনগুলো বড্ড রিপিটিটিভ লেগেছে।
হাস্যরসে ভরপুর ছবি। হো হো করে হাসার দৃশ্য যেমন আছে তেমনি ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রাখবার মত দৃশ্যেরও কমতি নেই। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, সবই ছিল প্রাণবন্ত। আর দশটা বাংলা ছবিতে যেমন জোর করে, কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা থাকে তা এ ছবিতে নেই।
এই ছবির গানগুলো সবই বেশ শ্রুতিমধুর। পাশাপাশি জায়গায় জায়গায় কিছু ক্লাসিক বাংলা গান আর দ্বিতীয়ার্ধের বিশেষ সিকোয়েন্সে দেশাত্মবোধক গানগুলো চমৎকার লেগেছে।
এরপরে বলতে হয় প্রথমার্ধের শেষ ভাগের টুইস্টটার কথা। একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল। সমান্তরাল গতিতে এগিয়ে যাওয়া কাহিনী এক লাফেই অন্য মাত্রা লাভ করে টুইস্টটার ফলে।
দুজনের অভিনয়ের প্রশংসা অবশ্যই করতে হয়। প্রথমেই আরেফিন শুভ। তার চেহারায় হিরোসুলভ জেল্লাটা যেমন বেড়েছে, তেমনি অভিনয় দক্ষতাও আগের থেকে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। একবারের জন্যেও এই ছবিতে তার অভিনয়কে লাউড বা অতি অভিনয় মনে হয়নি। তার স্ক্রিন প্রেজেন্স বাংলাদেশি ছবির প্রেক্ষাপটে সত্যিই অতুলনীয়। দ্বিতীয়ত বলতে হয় মিশা সওদাগরের কথা। সাম্প্রতিক সময়ে ভিলেনের রোল বাদে সাধারণ চরিত্রাভিনেতা হিসেবেও দিন দিন তিনি নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন তিনি। এই ছবিতেও তার কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। দুলাভাই চরিত্র বাংলা ছবিতে খুব একটা আকর্ষণ জাগানিয়া নয়। কিন্তু মিশার সৌজন্যে সেই চরিত্রটিই সবচেয়ে উপভোগ্য মনে হয়েছে।
এবার আসা যা আমার দৃষ্টিতে খারাপ লাগা দিকগুলোয়।
প্রথমত ছবির ওভারাল কাহিনী। ছবির চার ভাগের তিন ভাগ অব্দি আমি যথেষ্টই সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু শেষ দিকে এসে কাহিনী কেমন যেন ঝুলে গেল। নায়ক নায়িকার কিভাবে মিল করাবেন, এ ব্যাপারে পরিচালক হয়ত কনফিউজড হয়ে গেছিলেন। তাই শেষমেষ চিরাচরিত কিছু ঘটনার অবতারণা করে ছবিটায় টিপিক্যাল বলিউড মুভির কিছুটা দুর্গন্ধ ছিটিয়ে দিলেন।
এরপরে বলতে হয় অভিনয়ের ব্যাপারে। শুভ আর মিশা বাদে আর কারো অভিনয়ই মনে দাগ কাটতে পারে নি। বিশেষ করে হতাশ হয়েছি ইরেশ যাকেরের অভিনয়ে। মায়ের প্রযোজনার ছবি বলে তিনি একটু বেশিই এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিলেন কিনা কে জানে! নেতিবাচক চরিত্রে ইতিপূর্বে তিনি আরও ভালো পারফরমেন্স ডেলিভার দিয়েছেন। তাই এই ছবিতে তার অভিনয় অনেকের ভালো লাগলেও, আমার কাছে নিছকই একঘেয়ে লেগেছে।
এরপর আসা যাক সংলাপের ব্যাপারে। গড়পড়তা সংলাপ। এখানেও হয়ত পরিচালক কনফিউজড ছিলেন যে সিনেমাটিক সংলাপ দিবেন নাকি আধুনিক ঘরানার রিয়েল লাইফ সংলাপ দিবেন। শেষ পর্যন্ত যা দিয়েছেন তাকে উপরোক্ত দুইয়ের জগাখিচুড়ি বলা যায়।
গানের প্রশংসা আগেই করেছি। কিন্তু এই ছবির মোস্ট হাইপড সং তথা টাইটেল ট্র্যাকটাকে ছবিতেই পুরোই মিসইউজ করা হয়েছে। গানটা এমন জায়গায় এসেছে যা কাহিনীর মুডের সাথে একেবারেই যায় না। এবং এই গানের আগে কোন স্ট্রং স্টোরি বিল্ডআপও চোখে পড়েনি। গানটা সেকেন্ড হাফে ইউজ করা হলে, এবং গানটা সিচুয়েশন নির্ভর হলে ভাল হত।
মমকে কে মেকআপ করিয়েছে, তাকে কান ধরে উঠবস করানো দরকার। সত্যি বলতে প্রথম দিকে তাকে খুবই বিচ্ছিরি লাগছিল যার কারণ তার অতিরিক্ত মেকআপ। ছবির প্রধান দুইটা গানের মিউজিক ভিডিও-ও তার অতিরিক্ত মেকআপের কারণে সৌন্দর্য হারিয়েছে।
যাইহোক, ছুঁয়ে দিলে মন ছবির দর্শক রেসপন্স খুবই ভাল মনে হল। প্রায় সর্বত্রই বিকালের শো আর সন্ধ্যার শো হাউজফুল। সকালের শো-ও হাউজফুল হয়েছে অনেক জায়গায়। খুব শিগগিরই এই ছবিকে ঘিরে এ উন্মাদনা কমবে বলে মনে হয় না। প্রথমত অভিষেকই সিনেমা ডিরেক্টরিতে আশাতীত সফলতা দেখিয়েছেন শিহাব শাহীন। তাই পাবলিকের ওয়ার্ড অব মাউথ এই ছবির পক্ষেই যাবে নিঃসন্দেহে। তাছাড়া তিন দিন বাদেই পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণের অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে ছুঁয়ে দিলে মন দর্শন যদি সাধারণ মানুষের লিস্টে থাকে তো অবাক হওয়ার কিছু নাই। সবমিলিয়ে, সবকিছু যদি ঠিক থাকে, রোমিও ভার্সেস জুলিয়েটের পর বছরের দ্বিতীয় সুপারহিটের তকমা ছুঁয়ে দিলে মন পেতেই পারে।