Select Page

আরেকজন তোজাম্মেল হক বকুল পেলো না বাংলা চলচ্চিত্র

আরেকজন তোজাম্মেল হক বকুল পেলো না বাংলা চলচ্চিত্র

Balika Holo Bodhu a film by Tojammel Haq Bakulছবিতে শীতল পাটির উপর নান্দনিক যে পোস্টারটা দেখছেন সেটা আজ থেকে ২২ বছর আগের বাংলা বাণিজ্যিক ছবির একটি পোস্টার। পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ইতিহাস গড়া ‘’বেদের মেয়ে জোছনা’’ ছবি দিয়েই নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন। পোস্টারটি হলো সেই তোজাম্মেল হক বকুলের ৯০ দশকের একটি ব্যবসাসফল ছবি ‘’বালিকা হলো বধূ’’র পোস্টার।

সালাহউদ্দিনের ‘রুপবান’ দিয়ে উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে ফোক ছবির যে ধারা বাংলা চলচ্চিত্র শুরু করেছিল, ইবনে মিজান, আজিজুর রহমান, দারাশিকো’রা যে সেই ফোক ছবিকে দিয়েছিলেন ভিন্নমাত্রা আর তোজাম্মেল হক বকুল একাই দিলেন সেই ফোক ধারার ছবিকে পূর্ণতা। ফোক ছবি যে শিল্প সমৃদ্ধ এবং দর্শকদের আবেগ নিয়ে খেলার একটি বড় উপাদান হতে পারে সেটা তোজাম্মেল হক বকুল বারবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এই সেই তোজ্জামেল হক বকুল যার ছবিতে সেই সময়ের সুপারহিট সালমান, সানি, নাঈম, রুবেল, মান্না’র মতো নায়ক’রা অভিনয় করেনি কিন্তু বকুলের ছবি ব্যবসাসফল হতো। বকুলের ছবিতে তারকা বলতে ইলিয়াস কাঞ্চন, দিতি/অঞ্জু’দের দেখা যেতো এর বাহিরে তিনি নতুন মুখ নিয়ে কাজ করে সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন। কেমন সফল হয়েছেন সে সম্পর্কে দুটি তথ্য দেই।

‘৯৩ সালের শুরুর দিকে দিলরুবা খানের সুপারহিট ‘’পাগল মন’’ গানটিকে থিম ধরেই ‘’পাগল মন’’ নামের একটি ফোক রোমান্টিক ছবি নির্মাণ করেন যেখানে প্রধান নায়ক নায়িকা ছিলেন একেবারে অপরিচিত নতুন দুটি মুখ মেহেদী ও অন্তরা। সেই নতুন দুটি মুখ নিয়েই বকুলের ‘’পাগল মন’’ সুপার ডুপারহিট। ‘’পাগল মন’’ ছবির ব্যবসায়িক সফলতায় একই জুটিকে নিয়ে তিনি তৈরি করলেন আরও একটি ফোক রোমান্টিক ‘’বালিকা হলো বধূ’’ যার নান্দনিক পোস্টারটি দেখতে পাচ্ছেন। ‘’বালিকা হলো বধূ’’ ও ব্যবসায়িক সফলতা পেলো। মুক্তির পরপরেই প্রথম দু সপ্তাহ টানা চলছিল সিলেটের মনিকা সিনেমা হলে এবং ৩য় ৩ ৪র্থ সপ্তাহ চলেছিল সিলেটের ‘কাকলী’ সিনেমা হলে। তাহলে বুঝুন ছবিটি কেমন দর্শক প্রিয়তা পেয়েছিল?

বকুলের ছবির মূল উপাদান হলো খুব সহজ সরল গল্প যা আমাদের গ্রাম্য সমাজের প্রেক্ষাপটের সাথে মিলে যেতো। সিনেমা দেখলে মনে হতো বকুল গ্রামের কোন সত্যি ঘটনা ক্যামেরায় ধারন করে নিয়ে এসেছেন যার ফলে দর্শক ছবিটির মাঝে প্রান খুঁজে পেতো। এই উপাদানটিকে বকুল এমন ভাবে ব্যবহার করতেন যে ছবিতে তারকা অভিনেতা অভিনেত্রী আছে কি নাই সেটা কোন মুখ্য বিষয় ছিল না। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বকুল সবচেয়ে বড় চমকটি দিয়েছিলেন তাঁর ‘’আব্দুল্লাহ’’ ছবিটি দিয়ে। সালমান –সানি, মান্না –রুবেল এর মতো তরুন প্রজন্মের নায়কদের লড়াই যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই বকুল আব্দুল্লাহ ছবিতে নিয়ে এলেন সবার পরিচিত কৌতুক অভিনেতা দিলদার’কে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ‘’আব্দুল্লাহ’’ ছবিতে। এই প্রজন্মের সিনেমা দর্শকরা একবার কল্পনা করুন যে জনপ্রিয় সব নায়কদের দুর্দান্ত সময়ে এমন দুঃসাহস কিভাবে বকুল দেখাতে পেরেছিলেন? যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চন, সালমান শাহ, সানি, রুবেল, মান্না’র ছবিও অনেক সময় ব্যসাসফল হতে হিমশিম খেতো সেখানে তোজাম্মেল হক বকুল কোন নায়ক ছাড়াই দিলদার ও সিনিয়র অভিনেত্রী নতুন’কে (এর অনেক আগ থেকেই নতুনের একক নায়িকা ক্যারিয়ার সমাপ্ত হয়) নিয়ে সম্পূর্ণ সফল। শুধু সফল বললে ভুল হবে মহা সফল। মুক্তির পরপরেই সিলেটের ‘দিলশাদ’ সিনেমা হলেই টানা ৩ সপ্তাহ ‘’আব্দুল্লাহ’’ ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। আমরা যারা সালমান সানি’র ভক্ত সবাই হুমড়ি খেয়ে পরেছিলাম দিলসাদ সিনেমায় ‘’আব্দুল্লাহ’’ ছবিটি দেখার জন্য। ‘’আব্দুল্লাহ’’ ছবিটি দেখে সেদিন নিজেও স্বীকার করে নিয়েছিলাম ফোক ছবিতে তোজাম্মেল হক বকুল একটি ইতিহাস, একজন মাস্টার পিস পরিচালক যে পরিচালকের মেধা ও মননের মতো আজকের নতুনধারার নতুন নতুন বহু মেধাবী পরিচালকও কিছু না। আজ বকুল বেঁচে নেই যদি থাকতো তাহলে আমার বিশ্বাস চলচ্চিত্রে নতুন আসা আজকের অনেক পরিচালকদের মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র কি ও কিভাবে বানাতে হয় সেটা কান ধরে শিখিয়ে দিতেন ।

বহু বছর পর দুর্লভ এই পোস্টারটি পেয়ে পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুলের কথা মনে পরে গেলো । যিনি ধুমধারাকা তারকাবহুল ছবির ভিড়ে নিজেকে আলাদা ভাবে চিনিয়েছিলেন । তোজাম্মেল হক বকুল আজ নেই কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর ছবিগুলোর মাধ্যমে । বকুলের সৌভাগ্য যে বাংলা চলচ্চিত্রের এমন দুর্দশা তাঁর দেখা লাগেনি । দুর্লভ এই পোস্টারটি উপহার দেয়ার জন্য কাজল রিপন ভাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।


মন্তব্য করুন