Select Page

বাংলাদেশের সিনেমা আর নাটকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু কথা

বাংলাদেশের সিনেমা আর নাটকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু কথা

present condition on bangladeshi film and tv dramaআমাদের সিনেমার আর নাটকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। অনেকদিন ধরে বেশ কিছু কথা জমেছে। দীর্ঘ লেখার জন্য আগেই ক্ষমা চাচ্ছি।

১- আমাদের সিনেমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ কি? তামিল তেলগু বা হিন্দি সিনেমার নকল, তাও এমন পর্যায়ের নকল যেটা চেষ্টা করলেও উপভোগ করা বেশ কষ্টের। ওকে, একজন পরিচালক ভাবলেন নতুন কিছু নিয়া সিনেমা বানাই- নিজের দেশের কোন ঘটনা লাইক রানা প্লাজা। সব ঠিক হল, কিন্তু শেষে এসে তরী ডুবল। ইতিপূর্বে সিনেমাটি ঘিরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে এমন দোহাই দিয়ে সেন্সরবোর্ড চলচ্চিত্রটিকে আটকে দেয়। তারপর আদালত সিনেমাটি মুক্তি প্রদানের রুল জারি করে। ফলে কর্তন সাপেক্ষে মুক্তির তারিখ পেয়ে যায় ‘রানা প্লাজা’। কিন্তু এবার যখন সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার কথা তখন এই সিনেমায় ‘ভীতিকর চিত্র’ দেখানো হয়েছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত চলচ্চিত্রটি আগামী ৬ মাসের জন্য প্রদর্শনী এবং সম্প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেই সাথে এ সময়ে সিনেমাটির সেন্সর সার্টিফিকেটও অকার্যকর হিসেবে গণ্য হবে।

ক) অসন্তোষ- “আমার ভাই বোন যারা গার্মেন্টস এ কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে, তাঁদের নিয়ে সিনেমা বানানো হচ্ছে, আর সেটা আমাদেরকে দেখতে দিবে না! আটকায় রাখবে?” এই যুক্তি দিয়ে এখন যদি শ্রমিকেরা অসন্তুষ্ট হয় এবং একশনে যায়- তখন এর দায় দায়িত্ব কে নিবে?

খ) ‘ভীতিকর চিত্র’- একটা বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে, হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে- এটা কি আনন্দের দৃশ্য হবে? না হইলেও কি সেটাকে জোর করে আনন্দের দৃশ্য বানাতে হবে? মুক্তিযুদ্ধে অনেক মানুষ মারা গেছে যেটা যথেষ্ট ভীতিকর ছিল, সেগুলা কি দেখানো হয় না নাকি সামনে থেকে আর দেখাব না সেগুলা “ভীতিকর” বলে? এই প্রজন্মের বাচ্চারা কি জানবে যে “মুক্তিযুদ্ধ এমন ভয়ের কিছু না, জাস্ট কিছু ধিচকাও ধিচকাও খেলা হইসে!”

Rana Plaza (3)

গ) রানা প্লাজার পরিচালক নজরুল ইসলাম খান এর আগে কোন মাস্টারপিস বানান নাই, আমি তার আগের বেশ কিছু সিনেমা দেখসি- অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল না। কিন্তু ইনি সাহস করে নকলের দিকে না গিয়ে এরকম একটা সিনেমা বানাচ্ছেন- এজন্য তাকে সাধুবাদ দেয়াটা দরকার। আমাদের সেন্সর বোর্ড এখনও ১৯৬৩ সালের সেন্সর আইনে চলে, এই ২০১৫ এও। খারাপ পুলিশ দেখানো যাবে না, রাজনৈতিক বক্তব্য দেখানো যাবে না, সত্যিকারের পিস্তল রাইফেল দেখানো যাবে না- এতো “না” থাকলে একজন মানুষ আর কি সিনেমা বানাবেন? আপনি দর্শক হলে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করুন এভাবে কি সিনেমা বানানো যায়? একজন প্রোডিউসার তো চাইবেনই তার টাকা ফেরত আসুক, কি দরকার এতো ঝামেলার? তার চেয়ে তামিল ডিভিডি চালাও, সিনেমা বানাও। লুতুপুতু প্রেম দেখাও।

ঘ) সারা বিশ্ব যেখানে সার্টিফিকেট দেয় সিনেমার U বা A বা U/A, সেখানে এখনও আমরা ১৯৬৩ এর নিয়ম নিয়ে পড়ে আছি। শ্রদ্ধেয় প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম শাকিব খানকে নিয়ে অনেক আগে দেবদাস বানিয়েছিলেন, সেই দেবদাস সেন্সর বোর্ড আটকায় দিসিল। কারণ কি জানেন? সেখানে শহিদুজ্জামান সেলিমের পোশাক নাকি আমাদের কোন এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত এর সাথে মিলে যায়, এই কারণে ঐটার শুটিং আবার করতে হবে- সিরিয়াসলি?! পাশের দেশের সিংঘাম সিনেমাতে অজয় দেবগন “আতা মাজি সাটাকলি” বলে এক দুর্নীতিবাজ নেতার চেয়ারে লাথি মেরে তাকে ফেলে দেন- এই সিনেমা তো আটকান হয় নাই, উল্টা ১০০ কোটি কামাই করছে!

bangladeshi actor wears bracelet like salman khan

২- আমাদের ইন্ডাস্ট্রির এক নায়ক বলিউড এর সালমান খানকে বেশ পছন্দ করেন- ভালো কথা, করতেই পারেন। এতটাই করেন যে তিনি সালমানের মত হাতে সেম ব্রেসলেট পরেন এবং মাঝে মাঝে সালমানের সংস্থা “বিইং হিউম্যান” এর মত টিশার্ট পড়েন। আবার যখন এই দেশে সাল্লুর ওয়ান্টেড রিলিজ পায়, তখন আমাদের এই নায়কই গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে এবং হাতে সেই সালমানের ব্রেসলেট পরে – ভারতীয় সিনেমা আনা নিষিদ্ধ করতে হবে- এই মিছিলে নেমে পড়েন। এরকম ভণ্ডামির উদাহরণ কি পৃথিবীর আর কোন জাতিতে আছে?

৩- সিনেমা মোটা দাগে বললে দুই রকম- একটা “ভালো সিনেমা” আরেকটা শুধুই এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য সিনেমা- নাচ, গান, ফাইট। আমাদের সমস্যা হল আমরা দুইটার কোনটাই ভালমতো করতে পারছি না। ওকে, তোমার টাকা দরকার, ব্যবসা ভালো করতে হবে, ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি করতে হবে, কমার্শিয়াল সিনেমা দরকার- তাইলে বানাও সেটা সেরকম করে! এরকম তো দেখছি না। যেটা করবেন সেটা করার মত করেন- আইটেম সং এমনভাবে করেন যাতে শুনলে চেয়ার থেকে উঠে নাচতে ইচ্ছা করে! আমাদের দেশের আইটেম সংএর লাইটিং এর বাজে অবস্থা দেখলে অনেক হতাশ হই। মারামারি, নাচ- একটাও তো ঠিকমতো হচ্ছে না, দায়সারা গোছের এই ধরনের কাজ করে দর্শককে আর কতদিন বোকা বানাবেন? এরা কি আসলেই এতো বোকা- যেখানে সারা দুনিয়া এখন হাতের মুঠোতে। যাত্রাপালার মত চিৎকার করে সংলাপ আর কতদিন? ভিলেন মানেই বিচিত্র আলখেল্লা আর কতদিন? ধাক্কা লেগে নায়ক নায়িকার পরিচয় আর কতদিন? যারা শুধু ধুমধারাক্কা সিনেমার পক্ষে আর যারা শুধু “আর্ট উপচে পড়া” সিনেমার পক্ষে বলেন, তাঁদের প্রতি বলছি- ইন্ডাস্ট্রিতে সালমান খানকেও দরকার, ইরফান খানকেও দরকার। শুধু একজনকে দিয়ে চলবে না কোন ইন্ডাস্ট্রি, আপনে মানেন বা না মানেন এটাই সত্য। শুধু আর্ট দিয়া পেট ভরে না আবার পেট ভরাই সব কিছুর একমাত্র উদ্দেশ্য না।

৪- একটু টিভির দিকে আসি। একসময় গোলাভরা ধানের মত আমাদের টিভির অবস্থা বেশ ভাল ছিল, যেটা এখন শুধুই অতীত। হিন্দি সিরিয়ালের জ্বালায় আর ভাল্লাগে না কিছু। মা, খালার আর কাজের মেয়েকে দোষ দিয়া লাভ নাই, নিজের দেশের কি দেখবে তারা সারাদিন কাজ করার পর? খালি টক শো আর খবর! নাটক শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিট পরে আধা ঘণ্টার বিজ্ঞাপন, যেখানে ততক্ষণে জি বাংলার একটা সিরিয়াল শেষ হয়ে আরেকটা শুরু হয়ে যায়, তাঁদের বিজ্ঞাপন অনেক অল্প সময়ের আর সেখানেও তারা তাঁদের আরেকটা সিরিয়ালের বিজ্ঞাপন দেয়- কি পলিসি দর্শককে আটকে রাখার! তাইলে মা খালারা কেন দেখবে না? আমরা কেন পারিনা আটকে রাখতে? এতই অভাব আমাদের? হিন্দি প্রতিটা নাটক সিনেমাতে ইংরেজি সাবটাইটেল, এ গুলা দেখে আমার পিচ্চি কাজিন ইংরেজি শিখে গেছে হিন্দির পাশাপাশি- এটাকে আমি কি বলব?! নাটকের বাজেট কমতে কমতে যেই জায়গায় এসেছে এখন, শুনলে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকবেন। নতুন পরিচালকেরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে নাটক বানান, সেটা করেও শান্তি নাই। চরিত্র অনুযায়ী তারা আর্টিস্ট নিতে পারেন না। এজেন্সি যাদের ঠিক করে দিবে, বাধ্য হয়ে তাদেরকেই নিতে হবে। এজেন্সি কি দেখে আর্টিস্ট ঠিক করে জানেন? কার ফেসবুকে ফলোয়ার কত বেশি তা দেখে! এরপরেও শান্তি নাই, চ্যানেল ইচ্ছামত নাটক কেটে ফেলে, দর্শক কাহিনী বুঝুক বা না বুঝুক- আমার কি? নির্মাতা অমিতাভ রেজার একটা সাক্ষাৎকার শুনছিলাম বেশ কয়েকমাস আগে রেডিও তে। একটা নতুন চ্যানেল তার কাছে এসে বলেছিল, একটা স্ক্রিপ্ট বা আইডিয়া দেন, আমরা ভালো কিছু করতে চাই যাতে মানুষ টিভি দেখে। অমিতাভ উৎসাহী হয়ে হাউ আই মেট ইউর মাদার বা বিং ব্যাং থিওরি এর মত একটা “সিটকমের” আইডিয়া দিলেন আর বললেন নরমাল নাটকে যা লাগে তার চেয়ে মাত্র ১৫০০০ টাকা বেশি লাগবে, বাকিটা দর্শক দেখবেই, এভাবেই বানাব। মাত্র ১৫০০০ টাকার জন্য চ্যানেল রাজি হল না, ক্যান ইউ বিলিভ? অথচ সানি লিওন আসলে তাকে দেখতে ১৫০০০ টাকার অভাব হবে না 🙂 নাটক চলছে, সেটার নিচে দিয়ে খবরের স্ক্রল যাচ্ছে- ক্যান রে ভাই? নাটকের সময়ও আমাকে জোর করে খবর দেখাবি? নায়ক নায়িকার রোম্যান্টিক সিনের সময় আমি যদি নিচের স্ক্রলে দেখি- রাজশাহীতে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা- তাহলে আমি কীভাবে নায়ক নায়িকার রোমান্স এঞ্জয় করব আমাকে বলেন! আর কোন দেশে নাটক সিনেমার নিচে কি খবরের স্ক্রল যায়?

৫- আরেকটা জিনিস হইসে এখন, সিনেমার ট্রেলার খুব ঝকঝকে তকতকে, আর সিনেমা হলে গেলে একদম সাড়ে সর্বনাশ! “ফেসবুকের ট্রেলার দেখে কেও করিসনে আনন্দ, আড়ালে তার খুব বেশি ভালো সিনেমা নেই” – টাইপ অবস্থা হয়ে গেছে। আর আমাদের বর্তমান অবস্থা অনেকটা এরকম- ঢাকা মানে বাংলাদেশ আর ফেসবুকে হিট মানে সিনেমা হিট। সিনেপ্লেক্স আর বলাকাতে সিনেমা ভালো চললেই সিনেমা ভালো হবে না, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর হলের খবর কে রাখবে জনাব? ১২০০ হল থেকে কমতে কমতে হলের সংখ্যা এখন ৩১৮- সেই দিকে খেয়াল আছে? কীভাবে বাঁচবেন হল মালিকেরা? হল না থাকলে কই দেখাবেন সিনেমা? কোন বিভাগীয় শহরে ভালো হল নাই, হলে বসার মত পরিবেশ নাই, ছারপোকা মনের সুখে কামড়ায়- ঢাকার বাইরের হলগুলার এই সমস্যা কে ঠিক করবে? নাকি আপনারা সিনেমা বানাচ্ছেন শুধু ঢাকার দর্শকদের জন্য? বিনোদন কি শুধু এলিট ক্লাসের জন্য? প্রত্যন্ত অঞ্চলের “ফকিন্নির বাচ্চাদের” সিনেমার দেখার দরকার নাই? নাকি রিকশাওয়ালাদের রুচি জীবনে চেঞ্জ হবেনা, তারা ভালো কিছু নেয় না, তাঁদের জন্যই এই ধরনের একই ধাঁচের সিনেমা বানাই- এটাই শেষ কথা? প্রশ্ন হল এই দেশে যখন মহানায়ক বা সীমানা পেরিয়ে তৈরি হয়েছে- তখন তো সেটা সবাই দেখেছে! ঐ আমলে এই জিনিস সবাই দেখলে এই আমলে কেন না? ঐ আমলে কি গরীব মানুষ ছিল না?

৬- আমার রেডিওর অফিসে আমি বাংলাদেশের বিনোদনবিচিত্রা থেকে শুরু করে কলকাতার আনন্দলোক, বলিউড এর ফিল্মফেয়ার হয়ে রিডারস ডাইজেস্ট- সব রাখা হয়, আরজেদের কনটেন্ট দেয়ার জন্য। (বুদ্ধিটা আমার 😛 ) আমি সারাদিন বসে বসে সেগুলা পড়ার চেষ্টা করি, ভাল্লাগে আমার এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা। নিজের দেশের ম্যাগাজিন আর অন্যান্য ম্যাগাজিনের শুধু পৃষ্ঠার কোয়ালিটিতে না, মানেও দেখি আকাশ পাতাল পার্থক্য! দেশের ম্যাগাজিনের সব কথাবার্তা ঘুরেফিরে এক, সাক্ষাৎকার সেই গৎবাঁধা নিয়মে। মোশাররফ করিম পুরস্কার পেয়েছেন, সেটা নিয়ে সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্ন- কেমন লাগছে পুরস্কার পেয়ে? – মানে কি? কেও কি বলবে খারাপ লাগছে? পুরস্কার পাইলে কোন আদম সন্তানের আজ পর্যন্ত খারাপ লাগসে? আরও কিছু এই সিরিয়ালের প্রশ্ন যেগুলা ঘুরে ফিরে সবাইকে করা হয়- এখন কি নিয়ে ব্যস্ততা? সিনেমার ব্যাপারে আর কি ভাবছেন? এতো কাজ কীভাবে করেন? পরিবারকে সময় দেন কীভাবে? আপনাকে বেশি উৎসাহ দেয় কে? স্বপ্নের চরিত্র কি? চরিত্রের প্রয়োজনে আপনি কতটুকু খোলামেলা হতে রাজি? আজ থেকে ১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান? – মুখস্ত হয়ে গেছে, টানা এই ধরনের প্রশ্ন করে আমি এখন যে কারো ইন্টার্ভিউ নিতে পারব! :/

আর আনন্দলোক আর ফিল্মফেয়ার এর কথা নাইবা বলি। সাক্ষাৎকার মনে হয় আড্ডার মত, এতো প্রাণবন্ত! সাংবাদিক শুরুতেই প্রশ্ন করলেন- আগের চেয়ে বেশ সাইজে এসেছেন মনে হয়? নিয়মিত জিম করছেন বুঝি?- তাহলে কেন আমি টাকা খরচ করে দেশের ম্যাগাজিন পড়বো? আমার টাকার কি কোন দাম নাই? সময়ের দাম নাই? ও আচ্ছা, দেশপ্রেমিক হতে হবে তো! তার দেশপ্রেমের দায়িত্ব শুধু আমার একার? যখন তামিল থেকে কপি করেন তখন কই থাকে আপনার দেশপ্রেম? আরও বলছি- শীর্ষস্থানীয় এক ম্যাগাজিনে শাকিব খানের জন্ম তারিখ দেয়া সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ, অথচ আমি জানি এটা ২৮ শে মার্চ। এখন আমার মত কয়জন জানেন এটা? যারা না জানেন তাদেরকে যে এই ম্যাগাজিন ভুল জানাচ্ছেন- তার দায়িত্ব কে নিবে? তখন কই থাকে দেশপ্রেম? একই ম্যাগাজিনে অমিত হাসানের জন্মতারিখ ছাপান হইসে পর পর দুই দিন! গুগলে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও পুরাতন সিনেমার কিচ্ছু পাই না, গান পাই না, আর্টিস্টের ছবি পাই না- তাইলে কীভাবে জানাব নতুন প্রজন্মকে নিজের সোনালি দিনের সিনেমা সম্পর্কে? এক হুমায়ুন ফরিদির লেখার জন্য তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে আমার উপর দিয়ে যে কি গেছে এটা শুধু আমিই জানি। আর ফিল্মফেয়ারে দেখলাম অমরেশ পুরির মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে বিশেষ আয়োজন – তার ছেলে থেকে শুরু করে সহকর্মীদের সাক্ষাৎকার, তার বিখ্যাত সংলাপ (মোগাম্ব খুশ হুয়া, যা সিমরান যা) নিয়ে আয়োজন – কি এই সেখানে! এতো সম্মান যেখানে শিল্পীদের- সেখানের উন্নতি না হলে আমাদের হবে কোন যুক্তিতে? সিনেমার গান দেখানোর জন্য একটা আলাদা ভালো চ্যানেল নাই আমাদের, যেই টাকা সিনেমা বানাইতে খরচ করি তার ১০ ভাগের এক ভাগ প্রচারে খরচ না করলে সিনেমা ক্যান দেখবে মানুষ? মানুষ যদি নাই জানে- তাইলে ক্যামনে কি?

৭- যৌথ প্রযোজনার কথা বলে আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমাদের নায়িকারা অভিনয় করছেন, কিন্তু আমাদের নায়কদের কেউ নিচ্ছেন না 😉 স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নায়কেরা বেশ গোস্বা করেছেন এই ধরনের যৌথ প্রযোজনার উপরে। একটা প্রশ্ন ছিল- যারা এখন এটার বিরুদ্ধে বলছেন- তাঁদের কাওকে কলকাতার সিনেমাতে নায়ক হিসেবে নেয়া হলে তখন কি তারা এভাবে বলবেন নাকি চুপ হয়ে যাবেন? 😉

৮- যতটা সময় হলিউড আর বলিউড এর প্রশংসা করি বা তাঁদের গালি দেই, তার অর্ধেক সময় কি নিজেদের প্রবীণ একটা শিল্পীর খোঁজ আমরা রাখি? নব্বইয়ের বক্স অফিস কাঁপানো পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকন এখন কি পরিমাণে অসুস্থ আর কীভাবে দিনযাপন করছেন- সেটা আজকের প্রথম আলোর আনন্দ পাতা খুলার আগে কি কেও জানতেন বা জানার চেষ্টা করেছেন?

এতকিছুর পরেও কি আশা দেখি বা দেখব? হয়ত দেখব, কারণ এতো কিছুর পরেও কাজ হচ্ছে, কিছু মানুষ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, ঈদের আগের দিন রাত তিনটা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। এতকিছুর পরেও হাজার হাজার সিনেমাকে পেছনে ফেলে আমাদের মোশাররফ করিম জালালের গল্প সিনেমার জন্য পর্তুগালে বেস্ট অভিনেতার অ্যাওয়ার্ড পান। আমার রেডিও তে সবচেয়ে বেশি যেইসব গানের রিকুয়েস্ট আসে তার মাঝে থাকে ছুঁয়ে দিলে মন সিনেমার তাহসানের টাইটেল ট্র্যাক। এরপরেও ইউটিউব এ ইমরানের বলতে বলতে চলতে চলতে গানটি কয়েক লাখ বার ভিউ হয়। কলকাতার বরবাদ সিনেমার আসনা গানের যেই পরিমাণ ভিউ, তার চেয়ে বেশি ভিউ হয় যখন একই গানে আমাদের নুসরাত ফারিয়া নাচেন বাংলাদেশের একটি নাচের প্রোগ্রামে। সারাদিন হিন্দি বা কলকাতার সিরিয়ালের পরেও মোশাররফ করিমকে বা হাসান কে (তাহসান, কাজের মেয়ে তাকে হাসান বলেই চিনে 😛 ) দেখলে আর কিছু দেখতে চায় না, তাঁদের নাটক খুব আগ্রহ নিয়ে দেখে যদিও আমি জানি যে একজন খুব বেশি কাজ করে বা এক জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করে, আরেকজনের বিরুদ্ধে আছে ন্যাকামির অভিযোগ। কিন্তু তারপরেও এই দুইজনের কারণে এখনও যদি আমার বাসাতে দেশের চ্যানেল দেখা হয় তাইলে সমস্যা কই? ভাল্লাগে যখন শুনি মুসাফির সিনেমাতে গাওয়া তাহসানের পথ জানা নেই গানটি ১ লাখের মত বার ডাউনলোড হয়েছে। ভাল্লাগে যখন শুনি আশরাফ শিশিরের গাড়িওয়ালা নামক সিনেমা পৃথিবীর অনেক ফেস্টিভ্যালে ঘুরে পুরস্কার এনেছে, অথচ যেই সিনেমা শুরুতে আমাদের সিনেপ্লেক্স আর যমুনা দেখাতেই চায় নাই 🙂 এরপরেও মোশাররফ করিম গেল ঈদে “সুইচ অফ” নামের একটি নাটক করেন, যেটা পুরোটা এক “টেকে” করা, কোন কাট নাই 🙂

আশা রাখি এতকিছুর পরেও কারণ hope is a good thing, may be the best of thing and no good thing ever dies 😉


মন্তব্য করুন