Select Page

ঈদের তিন ছবিঃ পরিপূর্ণ মন ভরাতে পারেনি একটিও

ঈদের তিন ছবিঃ পরিপূর্ণ মন ভরাতে পারেনি একটিও

Love marriage podmo patar jol agnee 2ঈদের তিনটি ছবি দেখে যা বুঝলাম তা হলো গল্প, গান, লোকেশনের দিক থেকে ইমনের পদ্ম পাতার জল ছবিটি আমার কাছে এগিয়ে, শাকিব খানের লাভ ম্যারেজ ছবিটি বিনোদনের দিক থেকে এগিয়ে বা পরিপূর্ণ বিনোদনধর্মী ছবি আর মাহির অগ্নি ২ টেকনিক্যাল দিক থেকে এগিয়ে। সবগুলো ছবিতে ভুল আছে অনেক, যে ভুলগুলো না থাকলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা ভেবে শান্তি বা সান্ত্বনা পেতাম কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সান্ত্বনার চেয়ে দুশ্চিন্তা বা শঙ্কাটা বেশি। একটি ছবিও পরিপূর্ণ ভাবে মন ভরাতে পারেনি।
শাকিব খানের ভক্তদের প্রশংসার বৃষ্টি দেখে লাভ ম্যারেজ ছবিটি নিয়ে আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল কিন্তু দেখার পর মনে হলো ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নায়ক ভক্ত নামের তোষামোদকারিদের কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে দিন ভুলপথের পথিক হিসেবে রেখে চলেছেন। যার ভক্তরা জানেই না ছবিটি বলিউডের সালমান ও গোবিন্দের ৯০ দশকের কতগুলো ছবির ককটেল যাকে তারা মৌলিক গল্পের ছবি বলছে আর ১২৬ টি সিনেমাহলে মুক্তি পাওয়া নিয়ে রেকর্ড পরিমান ব্যবসা করার কথা ভাবছে!!!! ছবিটি মৌলিক সেই ক্ষেত্রে হতে পারে যাকে পরিপূর্ণ ‘ককটেল গল্প’ বলতে পারেন অর্থাৎ একটি ছবির হুবুহু নকল সেটা কেউ বলতে পারবে না ধরতেও পারবে না। লাভ ম্যারেজ ছবি দেখে বুঝলাম এই দেশে নায়কদের উন্নতি না হলেও খলনায়কদের উন্নতি হয়েছে এবং খলনায়ক হিসেবে জিয়াকে বেশ স্টাইলিশ, স্মার্ট মনে হয়েছে। নতুন অপুকে দেখতে ভালো লেগেছে কারণ অপু তার ভুলগুলো সংশোধন করে ফিরে আসার ও দীর্ঘদিন টিকে থাকার ইচ্ছাটা লক্ষ্য করা গেছেন সেই দিক দিয়ে শাকিব খান গতানুগতিক রয়ে গেছেন যেমনটা তার ভক্তকুলের বড় একটা অংশ চায়। শাকিব খানের ‘’লাভ ম্যারেজ’’ ছবিটি নিয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু বলার আর ইচ্ছে নেই কারণ যাদের জন্য বলবো তাঁরাই এসে পঙ্গপালের মতো পোস্টে হানা দিয়ে পোস্টটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে যাদের সাথে যুক্তিতর্ক করার কোন রুচি আমার নেই।

অগ্নি ২ নিয়ে বলতে গেলে একটি কথাই বলবো যে টেকনিক্যাল দিক দিয়ে এগিয়ে থেকেও ঈদের মধ্য সবচেয়ে নিম্নমানের ছবি হচ্ছে জ্যাজ এর ‘অগ্নি২’ যেখানে মাহিকে এতো বেশি দেখাতে গিয়ে পরিচালক গল্পটি দিয়ে কি বলতে চেয়েছেন বা গল্পটি কি সেটিই বোধগম্য হয়নি। পরিচালক ইফতেখার চৌধুরীকে সামনে পেলে জিজ্ঞেস করতাম ‘’ভাই অগ্নি ২ এর গল্পটা আপনার মনে আছে তো?’’ অগ্নি ২ নিয়ে কথা বলার চেয়ে মাহিকে নিয়ে কথা বললে অনেক ভালো হবে। আমার মনে বারবার একটাই প্রশ্ন ঘুরছে মাহি এই ছবি করতে গিয়ে প্রযোজক, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, পরিচালকদের কি দিয়েছিলেন বা কি দিয়ে তাবিজ করেছিলেন যার জন্য পর্দায় অহেতুক ‘’মাহিময়’’ করে দর্শকদের মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছিলেন ?

সব শেষে আসি ইমন অভিনীত ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবির কথায়। ‘পদ্ম পাতার জল’ দেখবো ও তা নিয়ে খুব দুর্দান্ত কোন রিভিউ লিখবো এমনটা ইচ্ছে জেগেছিল যেদিন থেকে শুনেছিলাম প্রিয় গীতিকার ও শ্রদ্ধেয় বড় ভাই লতিফুল ইসলাম শিবলি ছবিটির কাহিনী লিখছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে ছবিটা দেখার পর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়ার মতো কিছু পেলাম না বরং এমন কিছু বড় ধরনের ভুল পেয়েছি যা একটি সুন্দর গল্পের ছবিকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়েছে। অহেতুক, অতিরিক্ত প্রশংসা করার অভ্যাস আমার নেই তাই ছবিটি নিয়ে আমি আশাবাদী হইনি এবং অন্য আরেকজনকে দেখার জন্য উৎসাহ দেইনি। আমি আমার প্রিয় মানুষগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু না পেলে খুব কষ্ট পাই যেমনটা পেয়েছি শিবলী ভাইয়ের কাহিনীর পদ্ম পাতার জল ছবিতে। এই ছবির কেন্দ্রিয় চরিত্রের নাম ‘’ফুলেশ্বরি’’ যে নামটি আমি সর্বপ্রথম শুনেছিলাম বাংলা চলচ্চিত্রের অমর পরিচালক আজিজুর রহমানের ‘’ফুলেশ্বরী’’ ছবিটা দেখে। সেই ফুলেশ্বরী আর এই পদ্ম পাতার জল ছবির ফুলেশ্বরী দুজনই ভিন্ন দুই নারী এবং বর্তমানের ফুলেশ্বরী অনেক বেশি জৌলুসময় কিন্তু আমার কাছে সেই পুরনো ফুলেশ্বরীকে বেশি ভালো লেগেছে যাকে জীবনে প্রথম আর শেষ সেই একবারই দেখেছিলাম আজ থেকে বহু বছর আগে। সেই ফুলেশ্বরী আর বর্তমান ফুলেশ্বরির মাঝে মিল একটাই দুজনেই গতিময়, ছন্দময় কিন্তু বর্তমানের ফুলেশ্বরী’র আশাপাশের সবকিছু ছন্দহীন, গতিহীন যা বড় বেশি বিরক্তিকর।

‘অগ্নি২’ আর ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবির মিল আছে একটি জায়গায় তা হলো মাহি ও ইমন । অগ্নি ২ তে মাহিকে এতো বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেমন মাহি হয়ে উঠেছিল বিরক্তিকর ঠিক তেমনি পদ্ম পাতার জল ছবিতে ইমনকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ইমন হয়েছে সম্পূর্ণ ব্যর্থ একটা চরিত্র। ইমনকে পদ্ম পাতার জল ছবিতে কেউ মনে রাখবে না বরং মিমকে সব দর্শক এগিয়ে রাখবে। ছবিটি দেখে আমার প্রশ্ন জাগে ইমনকে কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক আসলে কি বানাতে চেয়েছিলেন? ইমন না হতে পেরেছে কবি, না হতে পেরেছে অহংকারি জমিদারের পুত্র, না হতে পেরেছে সাহসী প্রেমিক, না হতে পেরেছে ব্যর্থ প্রেমিক অর্থাৎ ইমন কিছুই হতে পারেনি বাস্তবে ঠিক আমার মতোই। ছবিতে সবচেয়ে ভালো অভিনয় করেছে মিম আর চরিত্রনুযায়ী শহিদুজ্জামান সেলিম, নিমা রহমান, চিত্রলেখা গুহ ও অমিত হাসান সবাই ভালো অভিনয় করেছে যাদের দেখলেই বুঝা যায় পরিচালকের অযত্নের কারনে আরও ভালো করতে পারেননি। অথচ শহিদুজ্জামান সেলিম ও অমিত হাসানের চরিত্রকে আরও বেশি গতিময় করে ছবিটিকে জমজমাট করার অনেক সুযোগ ছিল যা পরিচালক হয়তো একবারও ভেবে দেখেননি। ছবিটিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে অতি ধীরগতির চিত্রনাট্য, অতিরিক্ত গান ও কবিতা। দর্শক হল থেকে বের হয়ে প্রথমে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যাবে যে সে এতক্ষন সঙ্গীতানুষ্ঠান, আবৃতিনুষ্ঠান, নাটক, টেলিফিল্ম নাকি কোন
চলচ্চিত্র দেখলো তা নিয়ে। চিত্রনাট্য ঈদের সবগুলো ছবিতে খুবই দুর্বল ছিল যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল ছিল পদ্ম পাতার জল ছবিটির। চিত্রনাট্যর উপর পরিচালকের কোন প্রভাব ছিল না সেটা ছবিটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্পষ্ট বুঝা যায়। অথচ একজন পরিচালক চাইলেই পারে চিত্রনাট্যর অনেক কিছু বদল, সংযোজন ও বিয়োজন করতে যা পরিচালক তন্ময় তানসেন করার চেষ্টা করেননি। একটি সুন্দর গল্পের অসাধারন মৃত্যু ঘটালেন চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। পরিচালক তম্ময় তানসেন এর উচিৎ ভবিষ্যতে মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে কাহিনী ও চিত্রনাট্যর মাঝে গতি সঞ্চার করা। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির প্রধান শর্ত হলো কাহিনী ও চিত্রনাট্যর গাঁথুনি শক্তিশালী হওয়া যা গল্পটি একটি ছন্দময় ও গতিময়তার সাথে পর্দায় এগিয়ে যাবে। পরিচালকের উচিৎ একবার ছবিটি নির্মাণের আগে নিজেকে দর্শক সারিতে রেখে পুরো ছবিটাকে কল্পনা করা এবং তা হতে হবে কল্পনার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করার তাহলে পরিচালক চিত্রনাট্যটিকে শক্তিশালী করতে পারবেন। পদ্ম পাতার জল ছবিটিকে ‘’মিউজিক্যাল ড্রামা’’ আকারে নির্মাণ করতে গিয়ে ৭ টি গান ও একাধিক কবিতা যুক্ত করে ছবিটির গল্পের ছন্দপতন ঘটিয়েছেন কাহিনীকার চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ত্রয়ী। এই ছন্দপতনের কারণেই পাশে বসে থাকা বন্ধুটি প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বললেন “কি রে ভাই? শিবলি ভাই কি শুরু করলো ? ……শিবলি ভাই আমরা বুঝছি আপনি খুব ভালো গান ও কবিতা লিখতে পারেন এবার আমারে ছবিটা দেখতে দেন” যা শুনে মুচকি হেসে পারলাম না। এক কলিগ তো অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়েই গেলো এই বলে যে ‘’ এবার বুঝছেন কেন এই ছবি সিনেমা হলে আসে নাই ‘’? ……… সহ দর্শকদের এমন প্রতিক্রিয়া খুব কষ্ট দেয় যখন তা হয় প্রিয় কোন মানুষের সৃষ্টি । শিবলি ভাইয়ের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বিনীত অনুরোধ করছি যে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে যখন এসেছেন তখন বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ধারাটাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবেসে বুঝবার চেষ্টা করবেন এবং আমাদের আগামীতে জমজমাট গল্পের অসাধারন কোন ছবি উপহার দিবেন


মন্তব্য করুন