Select Page

তবুও ভালবাসিঃ এক রঙ্গিলা ফানুস

তবুও ভালবাসিঃ এক রঙ্গিলা ফানুস

বিপুল সংখ্যক দর্শকের সাথে দেখলাম অভিজ্ঞ পরিচালক ‘মনতাজুর রহমান আকবর’ এর ৫৫তম সিনেমা ‘তবুও ভালবাসি’। দশর্কনন্দিত এই সিনেমার ভাল মন্দ মিলিয়ে আমার আমার মতামতগুলি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে জানালাম।

একনজরে ‘তবুও ভালবাসি

কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্যঃ আবদুল্লাহ জহির বাবু
চরিত্র রূপায়নেঃ বাপ্পী, মাহী, সোহেল রানা, দিতি, অমিত হাসান, সুব্রত, মিজু আহমেদ, রেহেনা জলি ও অন্যান্য
গানের কথাঃ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শওকত আলী ইমন, আব্দুল আজিজ, শফিক তুহিন এবং ফুয়াদ।
সুর ও সঙ্গীত পরিচালনাঃ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, ফুয়াদ,শওকত আলী ইমন,শফিক তুহিন এবং ইমন সাহা
কন্ঠঃ কুমার বিশ্বজিৎ, সামিনা চৌধুরী, ন্যান্সি, শফিক তুহিন, নীলা,রাজিব, সায়মন, কিশোর
চিত্রগ্রহনঃ কামরুল আহমেদ পনির।
রূপসজ্জাঃ কামাল।
কোরিওগ্রাফীঃ মাসুম বাবুল ও সাইফ খান কালু।
এ্যাকশনঃ সালাম।
সম্পাদনাঃ তৌহিদ হোসেন চৌধুরী।
প্রধান সহকারী পরিচালকঃ প্রয়াত জি.এম. বাহার ও তবিবুর রহমান টুকু।
পরিচালনাঃ মনতাজুর রহমান আকবর
প্রযোজনাঃ জাজ মাল্টিমিডিয়া
মুক্তির তারিখঃ ২৭/০৯/১৩ ইং

কাহিনী সংক্ষেপঃ
প্রতিবাদী ও প্রণোচ্ছল যুবক সংগ্রাম (বাপ্পী) ঢাকা শহরে তার আত্মীয়ের ফ্যাক্টরীতে সিকিউরিটি ইনচার্য এর কাজ করে। ফ্যাক্টরীর নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে মুখোমুখি হতে হয় সন্ত্রাসী সাদা’র। যে সাদাকে দেখে সবাই ভীত থাকে সে পরাস্ত হয় সংগ্রামের কাছে। এরপর বন্ধু সজীবের বিয়েতে সংগ্রাম বেড়াতে যায় গাজীপুর। বন্ধুর ছোটবোন সুনয়না (মাহী) কর্তৃক বারবার অপদসস্থ হয় সংগ্রাম। সুনয়নার প্রতি দুর্বলতার কথা সে মুখ ফুটে বলতে পারেনা। একের পরে এক চলে তাদের প্রেমময় নখরা। সজীবের বিয়েতে চাঁদা দাবী করে বসে সন্ত্রাসী লাল (অমিত হাসান)। শুরুতে লালের অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে যেয়েও সংগ্রাম ঝামেলা এড়ানোর জন্য থেমে যায়। লাল এর হুমকিতে সুনয়নার বাবা (সোহেল রানা) অসুস্থ্য হয়ে পড়লে প্রতিবাদী হয়ে উঠে সংগ্রাম। লালকে পিটিয়ে নাঙ্গা করে রাস্তায় ছেড়ে দেয় সে। এলাকাতে লালের প্রভাব কমতে থাকলে লাল প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এরপর সংগ্রাম তার মা নীলা চৌধুরী (দিতি) এর আহবানে নিজ এলাকা ময়মনসিংহে যায়। সংগ্রামের মা ঐ এলাকার জনহিতৈষিণী চেয়ারম্যান। তার প্রতিদ্বন্দী আরেক সন্ত্রাসী মারহাবা কাজী (মিজু আহমেদ) যে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। একদিন নীলা চৌধুরী রাস্তা থেকে এক অসহায় মেয়েকে তোলে এনে নিজ বাসায় ঠাঁই দেন। সংগ্রাম আবিষ্কার করে এই মেয়েটিই হচ্ছে তার ভালবাসার মানুষ সুনয়না আর জানতে পারে এক দুর্বিষহ কাহিনীর কথা। প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে সংগ্রাম আর সুনয়নার বুকের ভেতর। অনিবার্য প্রতিদ্বন্দী হয়ে সামনে আসে লাল, সাদা আর মারহাবা কাজী। চলতে থাকে সংঘাত। এই সংঘাতের পরিনতি জানতে দেখুন ‘তবুও ভালবাসি’।

শক্তিমত্তাঃ ঝকঝকে প্রিন্ট, বিপুল তারকার সমাহার, বৈচিত্রময় গান ও এর দষ্টিনন্দন চিত্রায়ন, এ্যাকশন।

দুর্বলতাঃ দুর্বল চিত্রনাট্য ও সংলাপ, কন্টিনিয়িটি ও কেন্দ্রীয় চরিত্রের দুর্বল অভিনয়।

রেটিঙঃ ৬/১০

সমালোচকের দৃষ্টিতে ‘তবুও ভালবাসি

কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্যঃ
একটি পাঁচমিশালী কাহিনী। কোন নতুনত্ব দেখা যায়নি। কিছু কিছু বিরক্তিকর সংলাপ দেখা গেছে। চিত্রনাট্যের কিছু লিংক মিসিং ছিল। একটু সচেতন হলে আরোও ভাল হতো।

অভিনয়ঃ
মাহী, দিতি অমিত হাসান খুবই ভাল অভিনয় করেছেন। মাহীর ভুত ধরার দৃশ্যটি আরেকটু ভাল করা যেত। বাপ্পীর ভয়েস কোয়ালিটি উন্নত করা উচিৎ। চরিত্রের মাঝে যে পাওয়ার থাকা উচিৎ (সন্ত্রাসীদের মোকাবেলার সময় বা তাদের চ্যালেঞ্জ করার সময়) তা বাপ্পীর মাঝে দেখা যায়নি। অভিজ্ঞ সোহেল রানার কাছে প্রত্যাশা বেশী ছিল কিন্তু আশানুরুপ পাইনি। মিজু আহমেদের থেমে থেমে ডায়ালগ ডেলিভারী দৃষ্টিকটু লেগেছে। আজও প্রম্পটিং ছাড়া মিজু আহমেদ ডায়ালগ ডেলিভারী করতে না পারাটা দুঃখজনক। ক্ষনিকের জন্য পর্দায় হাজির হওয়া কিরনপুরী (পরিচালক শাহ আলম কিরন) দৃষ্টি কেড়েছেন। অন্যরা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন।

গানঃ
গানগুলিতে নতুনত্বের প্রচেষ্টা ছিল। ভাল লেগেছে ‘‘এলোমেলো সময়’’, ‘‘বিয়ার সানাই’’ ও ‘‘সোনালী কাবিন” । দর্শক আইটেম গান ‘‘জ্বালাই আগুন লন্ঠনে’’ উপভোগ করেছে। গানের চিত্রায়ন ভাল লেগেছে (‘‘জ্বালাই আগুন লন্ঠনে’’ বাদ দিয়ে) ।

এ্যাকশনঃ
এ্যাকশন দৃশ্যে ফাইট ডিরেক্টর সালাম বৈচিত্র আনতে প্রচুর কেবল শট (Cable Shot) এর অবতারনা করেছেন যা ক্ষেত্রবিশেষে হাস্যকর লেগেছে। তামিল ও তেলেগু সংস্কৃতি আর আমাদের সংস্কৃতি এক নয়। তাই তাদের কাছে যা গ্রহনযোগ্য তা কি আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে ?

শিল্প নির্দেশনাঃ
বাংলা সিনেমার রীতি অনুযায়ী শিল্প নির্দেশনায় কম জোড় দেয়া হয়েছে। তবে ‘‘সোনালী কাবিন …’ গানের সেট ভাল লেগেছে।

পোষাক, অঙ্গসজ্জা ও মেকাপঃ
পোষাক, অঙ্গসজ্জা ও মেকাপ এর দিকে আরেকটু নজর দিলে ভাল লাগত।

চিত্রগ্রহনঃ
চিত্রগ্রহন দুর্বল থাকলেও পরিচালক তার অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেক শটের সমাহার ঘটিয়ে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করেছেন। দিতি বাপ্পীর প্রথম দেখা হওয়ার দৃশ্যে আর্কশট (Arc Shot) টি দৃষ্টিকটু লেগেছে। কিছু কিছু দৃশ্যে (বিয়ার সানাই … গান ও শেষ এ্যাকশন দৃশ্য) ক্রোমা কিংয়িং (Chroma Keying) অপ্রয়োজনীয় এবং দুর্বল মনে হয়েছে।

আলোকসম্পাতঃ
পুরো সিনেমাতে আলোকসম্পাত মোটামুটি ভাল হয়েছে। সংগ্রাম যখন সুনয়নাদের বাড়ী আসে সেদিন রাতে খাবার খাওয়ার দৃশ্যে শুধুমাত্র টেবিল আলোকিত ছিল আর পুরো ঘর আঁধারী। সোর্স লাইট (Source light) কি ছিল? আইটেম গানটিতে হাই কি লাইটিং (High Key Lighting) হলে ভাল লাগত।

সম্পদনাঃ
টাইটেল কার্ড ভাল হয়েছে। সম্পাদনায় আরো একটু সচেতন হলে আরো গতিময় সিনেমা দেখতে পেতাম। শেষ দৃশ্যে লাল যখন সংগ্রামকে বলে ‘‘রাস্তা মাপতে লাগে মিটার…ওজন মাপতে গ্রাম…’’ এই সংলাপ দ্বারা বুঝা যায় সংগ্রামের এই কমন ডায়লগ (যা পুর্বে ব্যবহৃত হয়েছে) সম্পাদনার টেবিলে বাদ পড়েছে। তাই লাল এর এই সংলাপ অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

কালার গ্রেডিংঃ
কালার গ্রেডিং এ আরেকটু সচেতন হলে ভাল হতো। কিছু কিছু জায়গায় কনট্রাস্ট (Contrast) ও ব্রাইটনেস (Brightness) কম ছিল। মোদ্দাকথা ঝকঝকে ছবির মাঝেও ফিল্মি টাচ এর অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

পরিচালনাঃ
অভিজ্ঞ পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর এর কাছে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা বেশী ছিল। আরো বেশী শটের বৈচিত্র থাকলে ভাল লাগতো। শেষদৃশ্যে জনতার প্রতি দিতির আহবানে অপূর্ণতা ছিল। যা আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যেত।

পরিশিষ্টঃ
সর্বোপরী বলা যায় “তবু ভালবাসি’’ নাচ, গান ও এ্যাকশনে ভরপুর এক রঙ্গিলা ফানুস। যা হলে বসে তিনঘন্টা উপভোগ করা যায় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী আবেদন নেই।

২৯ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ইং।


২ টি মন্তব্য

  1. বেকার যুবক

    রিভিউ ভালো হয়েছে। তবে একটু সংশোধণীঃ

    নায়কের মা লায়লা চৌধুরী, নীলা চৌধুরী নয়।
    ভিলেন মারহাবা গাজী, কাজী নয়।
    সিনেমার নাম তবুও ভালোবাসি, তবুও ভালবাসি নয়।

    সম্ভবত একবার দেখেছেন, তাই নামগুলো ঠিকমতো ধরতে পারেননি। তারপরেও রিভিউ ভালো হয়েছে।

মন্তব্য করুন