খালিদ মাহমুদ মিঠুর প্রথম পরিচয় তিনি একজন চিত্রশিল্পী। তার দ্বিতীয় পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। মাত্র দুটি চলচ্চিত্র নির্মান করেছেন তিনি। কিন্তু তার প্রথম চলচ্চিত্রই একাধিক ক্যাটাগরীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি চিত্রনাট্য রচনা এবং চলচ্চিত্র সম্পাদনার কাজও করেছেন।
চলচ্চিত্রের প্রতি খালিদ মাহমুদ মিঠুর আগ্রহ তৈরী হয় ছেলেবেলাতেই। গুণী পরিচালক আলমগীর কবির ছিলেন তার মামা এবং মিঠুর পড়ার টেবিলের পাশেই ছিল আলমগীর কবিরের সম্পাদনার টেবিল। তার চলচ্চিত্র নির্মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকেই হাতেখড়ি হয় খালিদ মাহমুদ মিঠুর। তাছাড়া, তার মা বেগম মমতাজ হোসেন চিত্রনাট্যকার ছিলেন যা তাকে উৎসাহিত করে। পরবর্তীতে চারুকলায় পড়াকালীন সময়ে ফটোগ্রাফিতে পুরস্কার জয়ে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় এবং তিনি চলচ্চিত্র নির্মানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। ১৯৮৬ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে চিত্রগ্রহণ এবং চিত্রনাট্য রচয়িতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯৯২ সালে খালিদ মাহমুদ মিঠু সার্ক সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির আওতায় একটি গানের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে পরিচালনায় তার অভিষেক ঘটে। পরের বছর ১৯৯৩ সালে ‘ধূসর অ্যালবাম’ নামে প্রথম নাটক পরিচালনা করেন। এর পরে তিনি সব মিলিয়ে ৬০-৭০ টি নাটক, শতাধিক গানের অনুষ্ঠান এবং কিছু প্রামাণ্যচিত্র নির্মান করেন। গহীনে শব্দ পরিচালনার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র নির্মানযাত্রা শুরু করেন।
২০১৬ সালের ৭ মার্চ আকস্মিক দুর্ঘটনায় এই গুণী পরিচালকের মৃত্যু হয়। বাসা থেকে রিকশাযোগে কাজে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি গাছ তার উপর পতিত হলে তিনি মারাত্মক আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
খালিদ মাহমুদ মিঠু বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনা করেন যা সময় প্রকাশনী থেকে ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়। বইটির নাম ‘হুমায়ূন স্যার ও কিছু স্মৃতি’।
১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করা খালিদ মাহমুদ মিঠু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ১৯৬৮ সালে এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার স্ত্রী কনকচাঁপা চাকমাও একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী। তাদের দুটি সন্তান – পুত্র আর্য শ্রেষ্ঠ এবং কন্যা শিরোপা পূর্ণা। শিরোপা পূর্ণাও একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আওয়ার বোট ইজ আওয়ার অ্যাড্রেস’ দিল্লী চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।